সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে হাতিয়ার করেই এবার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে আরও একবার মোদী সরকারকে সংসদের ভিতরে ও বাইরে চেপে ধরার পরিকল্পনা করছে তৃণমূল, এমন আভাসই মিলেছে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েনের কথায়৷ দলের সংসদীয় রণকৌশল বা পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান না করলেও সোমবার ডেরেক বলেন, ‘আদানি প্রতারণা ইস্যুতে সত্যটা জানা খুব প্রয়োজন, আমাদের সত্য পর্যন্ত পৌঁছতেই হবে৷’
এই মর্মেই ডেরেকের সংযোজন, ‘ভারতীয় জীবন বিমা নিগম এবং স্টেট ব্যাঙ্কের তরফে আদানি গোষ্ঠীতে করা বিরাট অঙ্কের বিনিয়োগ আজ ঝুঁকির মুখে৷ জীবন বিমা এবং স্টেট ব্যাঙ্ক – এই দুটি সংস্থা দশকের পর দশক ধরে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করেছে৷ এরা দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের অভিভাবক৷ এই সঞ্চয় গুলিই আজ ঝুঁকির মধ্যে আছে৷’ আগামী সোমবার ১৩ মার্চ থেকে শুরু হবে সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব, চলবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত৷
বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বে আদানি কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল, কংগ্রেস, বাম, ডিএমকে, আম আদমি পার্টি-সহ বিরোধী দলগুলি তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। সেই সময়ে তৃণমূল, সিপিএম এবং সিপিআই-এর তরফে সংসদে শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে আদানি প্রতারণার অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল৷ কংগ্রেস-সহ বাকি দলগুলি ছিল যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করে তদন্তের পক্ষে৷
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাম দলগুলির সঙ্গে এক সুরে থাকা তৃণমূলের দাবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে৷ এ প্রসঙ্গে ডেরেক বলেন, ‘তৃণমূল এবং বামেরা একই কথা বলছে, তা নিশ্চয়ই বিরল। অনেকটা পঙ্কজ উধাসের সঙ্গে লেডি গাগার যুগলবন্দি৷ তবে, বিপরীত নীতিতে অবস্থানকারী রাজনৈতিক দলগুলিও অনেক ক্ষেত্রে বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে একমঞ্চে অবস্থান করে থাকে৷ ২০১৬ সালে নোটবন্দির পরে সংসদ ভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত পদযাত্রা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন এনডিএ শরিক শিবসেনা (অবিভক্ত) শরিক হয়েছিল।’
জেপিসি-কে সমর্থন না করার ক্ষেত্রে ডেরেকের যুক্তি, ‘সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে তৈরি হয় জেপিসি। তাতে শাসক দলের প্রতিনিধি বেশি থাকে, কমিটির নেতাও হন শাসক শিবির থেকেই৷’ তাঁর দাবি, অধিকাংশ সময়েই জেপিসির চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি নিয়ে বিবাদ দেখা যায়, যেখানে শাসক শিবির তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে জোর করে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করে থাকে৷ তবে সুপ্রিম কোর্টের প্যানেল গঠন ও তার তদন্তকে এখনই পুরো নম্বর দিচ্ছেন না ডেরেক।
এই প্রসঙ্গে ১৯৮৭ সালের বফর্স , ১৯৯২ সালের হর্ষদ মেহতা কেলেঙ্কারি এবং ২০০১ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির মতো ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন ডেরেক, যে ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি যৌথ সংসদীয় কমিটি কার্যত কোনও কাজেই লাগেনি বলে অভিযোগ তাঁর৷