কুন্তল তা ফেরত চাননি এবং তিনিও টাকা ফেরত দেননি বলে স্বীকার করেছেন সোমা। তার পরে দীর্ঘ সময়ে কেটে গেলেও কেন ঋণ হিসেবে দেওয়া ওই টাকা ফেরত চাইলেন না কুন্তল, সোমাই বা কেন টাকাটা ফেরালেন না – এই প্রশ্নে ধন্দে ইডির তদন্তকারীরা। কাল, শুক্রবার ব্যবসার যাবতীয় ব্যালান্স শিট নিয়ে ফের সোমাকে তলব করেছে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
বুধবার প্রকাশ্যে এসে সোমাই সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ঋণ হিসেবে কুন্তলের থেকে ওই টাকা নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা আর ফেরত দেননি। টাকাটা তিনি ব্যবসার কাজে ব্যবহার করেছিলেন বলে সোমার দাবি। কিন্তু এতদিনেও কেন ওই টাকা তিনি ফেরত দিলেন না, সে প্রশ্নের স্পষ্ট ব্যাখ্যা তাঁর কাছে মেলেনি। সোমা এ দিন সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘ব্যবসার যাবতীয় ব্যালান্স শিট নিয়ে আমাকে দেখা করতে বলা হয়েছে।
আমি তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করব।’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘আমার কোনও রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও বিন্দুবিসর্গ জানি না।’ গত শুক্রবার, ৩ তারিখ ইডি প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করে সোমাকে। সে দিন আবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজিরা ছিল হুগলির তৃণমূল যুবনেতা কুন্তলের।
হাজিরার সময়ে সাংবাদিকরা তাঁর কাছে সোমার ব্যাপারে জানতে চান। কুন্তল তখন বলেছিলেন, ‘আমার সঙ্গে ওঁর কোনও সম্পর্ক নেই। যার সঙ্গে আছে, তাকে জিজ্ঞাসা করুন। আমি চিনি না।’ যদিও কার সঙ্গে সোমার সম্পর্ক আছে, সে ব্যাপারে কুন্তল রা কাড়েননি।
সোমা অবশ্য বুধবার বলেন, ‘কুন্তল আমার ভালো বন্ধু ছিল। একজন কমন ফ্রেন্ডের মাধ্যমে ২০১৭-র শেষে ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।’ তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২০১৭-র শেষ দিক থেকেই বেশ কয়েক ধাপে কুন্তলের অ্যাকাউন্ট থেকে সোমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫০ লক্ষ টাকা ঢুকেছিল। তারপর কয়েকটি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ট্রান্সফার হয়ে যায়।
এ দিন সোমা বলেন, ‘আমার ব্যবসায় একটা সমস্যা চলছিল। তাই লোন হিসেবে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন কুন্তল। আমার কর্মীদের বেতন, ব্যবসার জন্য জিনিসপত্র কেনা-সহ অনেক কাজ থাকে। সে জন্যই ওই টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে।’ সোমা স্বীকার করেন, ওই টাকা কুন্তল ফেরত চাননি এবং তিনি নিজেও তা এ পর্যন্ত ফেরত দেননি। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘আমি টাকাটা ফেরত দিয়ে উঠতে পারিনি। আসলে ২০১৮-র মাঝামাঝি থেকে আর আমাদের যোগাযোগ ছিল না। তার কিছুদিন বাদে করোনা পর্ব শুরু হয়ে যায়।’
তদন্তকারীদেরও ইতিমধ্যে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন সোমা। কিন্তু ইডির আধিকারিকদের বক্তব্য, ৫০ লক্ষ যথেষ্ট বড় অঙ্কের টাকা। সেই টাকা এতদিনেও কুন্তল ফেরত চাইলেন না কেন, সেটা জানা প্রয়োজন। তাই সোমার ব্যবসার ব্যালান্স শিট খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, নিয়োগ দুর্নীতির টাকা বিভিন্ন সময়ে অনেক অ্যাকাউন্টে সরানো হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত তদন্তে উঠে এসেছে। সোমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও সে কারণে ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে।
সোমা অবশ্য জানান, তাঁর নেল পার্লারের ব্যবসার বয়স প্রায় ন’বছর। তিনি এর জন্য ব্যাঙ্ক থেকেও ঋণ নিয়েছিলেন। পাশাপাশি অন্য জায়গা থেকে ঋণ সংগ্রহ করেন। যখন কুন্তলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়, তখন তাঁর কাছ থেকেও ঋণ হিসেবে টাকাটা নিয়েছিলেন তিনি।