সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এ দিকে গ্রামোন্নয়নে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। রাজ্যেরও আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। এ সব সত্ত্বেও ফেব্রুয়ারির শেষে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ১৭৭৪ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা খরচ না হয়ে পড়ে আছে বলে খবর। যা নিয়ে বিরক্ত নবান্ন। গত তিন মাস ধরে মুখ্যসচিব ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হওয়ায় খরচে সামান্য গতি এলেও মার্চের মধ্যে সব টাকা খরচের সম্ভাবনা কম বলেই নবান্ন সূত্রের খবর।
পঞ্চায়েত দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, দশটি জেলায় ৪০ শতাংশের বেশি টাকা পড়ে রয়েছে। জেলাগুলি হলো – বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুর। অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে প্রতিটি জেলাকে জনসংখ্যার নিরিখে গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়। পাঁচ বছর ধরে ধাপে ধাপে এই টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। যার বড় অংশ ব্যয় করার দায়িত্বে থাকে গ্রাম পঞ্চায়েত।
নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মেনে ৬০ শতাংশ টাকা বরাদ্দ হয় শর্তাধীন তহবিল বা টায়েড ফান্ডে। পানীয় জল ও স্যানিটেশন প্রকল্পে তা ব্যয় করতে হয়। এই তহবিলের বরাদ্দ পেতে জেলাগুলিকে প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক প্রকল্প অনুমোদনের জন্য জমা দিতে হয়। বাকি ৪০ শতাংশ বরাদ্দ হয় আনটায়েড বা নিঃশর্তাধীন তহবিলে।
এ ক্ষেত্রে খরচে গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বাধীনতা রয়েছে। এই বরাদ্দে অনুমোদন পেতে বছরের গোড়ায় পছন্দ মতো প্রকল্প নিয়ম করে জমা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতকে। এই অর্থ মূলত গ্রামীণ পরিকাঠমোগত বিকাশে খরচ করার কথা। বেতন, প্রশাসনিক বা পরিবহণ সংক্রান্ত কাজে এই টাকা খরচ করা যায় না। এলাকার সমষ্টিগত উন্নয়নের স্বার্থেই তা ব্যয় করার কথা।
হাওড়া, আলিপুরদুয়ার, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রায় ৬৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করতে পেরেছে। সে জায়গায় দক্ষিণ দিনাজপুর ১১৪ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা পেলেও খরচ করেছে মাত্র ৫৮ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা। পঞ্চায়েত দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, আগের দফায় মুর্শিদাবাদ পেয়েছিল ৪৬৩ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
যার মধ্যে ১৯১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে পারেনি। আর জানুয়ারি মাসে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মতো রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে আরও ১,৬৬০ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। নতুন আর্থিক বছরের মধ্যে যা খরচ হওয়ার কথা। এই টাকা যাতে পড়ে না থাকে, সে জন্য জেলাশাসকদের আগাম পরিকল্পনা করে অনুমোদন নিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। যাতে অর্থ বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। মুর্শিদাবাদ, দার্জিলিং, কালিম্পং কিছুই করেনি বলে দপ্তর সূত্রের খবর। এই দফায় মুর্শিদাবাদ পেয়েছে আরও ১৪৮ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা।