পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে গঠনের আগে একাধিকবার ভাঙা গড়ার খেলা হয়েছে এই জেলাকে নিয়ে। তবে বর্তমানে আয়তনের দিক থেকে এ রাজ্যের চতুর্থ বৃহত্তম জেলা বাঁকুড়া। এই জেলার মোট আয়তন বর্তমানে ৮৮২ কিলোমিটার।
শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি সারা দেশে সবকিছুতেই অনন্য নজির রয়েছে এই জেলার। এখানকার পাঁচমুড়ার ঘোড়া শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।ইতিহাস বলছে, ১৭৮৭ সালে বিষ্ণুপুরের অংশটি বীরভূমের সঙ্গে একত্রিত হয়ে একটি পৃথক প্রশাসনিক ইউনিট গঠিত হয়।
পরবর্তীকালে বাঁকুড়া এবং বীরভূম একই জেলায় রূপান্তরিত হতে শুরু করে। ১৮৭৯ সালে খাতড়া ও রায়পুর থানা এবং সিমলাপালের ফাঁড়ি মানভূম থেকে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীকালে সোনামুখি, কোতুলপুর ও ইন্দাসের থানাগুলি বর্ধমান থেকে পুনঃস্থাপনের ফলে জেলাটি বর্তমান রূপ লাভ করে।
কিছুদিন এই জেলা পশ্চিম বর্ধমান নামে পরিচিত ছিল। অবশেষে ১৮৮১ সালে বাঁকুড়া জেলা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সহধর্মিনী শ্রী শ্রী মা সারদার পূণ্য জন্মভূমি এই জেলাতেই।
পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ, যামিনী রায়, শ্রীরামকৃষ্ণ পুঁথির রচয়িতা অক্ষয় কুমার সেন, সাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরুর মতো মানুষরা এই লাল মাটিতেই জন্ম নিয়েই ধন্য করেছেন গোটা দেশকে। পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও এই জেলার অবদান ভোলার নয়।
অন্যদিকে, মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর আর বিষ্ণুপুরের সঙ্গীত ঘরানার সঙ্গে পরিচিতি নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও শুশুনিয়া, মুকুটমনিপুর তো আছেই। বর্তমান সময়ে শিক্ষায় সামনের সারিতে উঠে এসেছে এই জেলা।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের নিরিখেও সাফল্য নজরকাড়া। উল্লেখ্য, খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে দ্বারকেশ্বর নদের উত্তর তীরে তাম্র-প্রস্তর যুগীয় জনবসতি গড়ে উঠেছিল এই এলাকায়।
বাঁকুড়া জেলার আদি বাসিন্দা ছিল একাধিক প্রোটো-অস্ট্রালয়েড ও প্রোটো-দ্রাবিড়ীয় জনগোষ্ঠীর মানুষ। পরবর্তী প্রাগৈতিহাসিক যুগে আর্য জাতি এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যায়। প্রাচীন যুগে এই জেলা ছিল দেশের রাঢ় অঞ্চলের অধীনস্থ।