বিচারকের কাছে পার্থর প্রশ্ন, ‘আমার পা ফুলে ঢোল হয়ে যাচ্ছে। যদি মরেই যাই, তা হলে বিচার করে কী হবে?’ আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে অর্পিতা তাঁর মায়ের শারীরিক অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে জামিনের আবেদন জানান। যদিও সওয়াল-জবাব শেষে এ দিন কাউকেই জামিন দেয়নি আদালত। জেলেই আছেন তাঁরা।
বিশেষ সিবিআই কোর্টের বিচারক বিদ্যুৎকুমার রায়ের এজলাসে সওয়ালে মানিকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘সিবিআই কোনও দোষ খুঁজে পেল না। গ্রেপ্তার করল না। এফআইআরেও নাম নেই। অথচ এই প্রথম দেখলাম, ইডি কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে, তা ঠিক মতো বলতে না পেরে যুক্তি দিচ্ছে, আমার মক্কেল তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন!’ এ দিনই মানিকের জামিন-আর্জি শোনার আবেদন জানান সঞ্জয়।
ইডি-র কৌঁসুলি ফিরোজ এডুলজি শুনানির জন্য চার সপ্তাহ সময় চান। পরে বিচারক দু’পক্ষের সহমতের ভিত্তিতে আগামী মঙ্গলবার মানিকের জামিনের আবেদন শুনানির দিন ধার্য করেন। সওয়াল-জবাব শেষে বিচারকের উদ্দেশে মানিক বলেন, ‘একটা চিঠিতে চাকরি প্রার্থীরা লিখলেন, ৭ লক্ষ টাকা করে দিয়ে ৪২ জন চাকরি পেয়েছেন।
সেই চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়। এর ভিত্তিতে আমি গ্রেপ্তার হয়ে গেলাম! কিন্তু আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ কই? আর কতদিন জেলে আটকে থাকব? আমাকে জামিন দিন হুজুর।’ তার পরেই ছলছল চোখে উপরের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘হয় আমাকে রেহাই দিন, নয়তো এমন একটা অর্ডার দিন যাতে আর ঘুম না ভাঙে…।’ তাঁর সংযোজন, ‘আমি আইনের ছাত্র। যে ভাবে মামলা চলছে, আমি যা শিখেছি, সব ভুলে যেতে বসেছি।
প্রতিদিন আমি কোর্টে আসি, আরও এক দিন আসার জন্য।’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘এ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা দু’ভাগে বিভক্ত – প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের অন্তর্ভুক্ত। অথচ ১,০০০ পাতার যে চার্জশিটে আমার নাম আছে, তার পুরোটাই নবম-দশম এবং শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগের সঙ্গে জড়িত।
তা হলে আমি কী করে মামলায় যুক্ত হলাম? প্রাথমিকে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের কোনও ব্যবস্থাই নেই।’ যদিও ইডি আগেই দাবি করেছে, শুধু প্রাথমিকে নয়, স্কুলে যাবতীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছেন মানিক। গত ২৬ অক্টোবর থেকে জেলে আছেন মানিক। পার্থ এবং অর্পিতা আছেন প্রায় ৮ মাস। পার্থর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী এ দিন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর স্বাস্থ্যের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের আর্জি জানান। তিনি বলেন, ‘এইমসের তরফে মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করতে বলা হয়েছিল।’
বিচারক বলেন, ‘জেলের ভিতরে তেমন পরিকাঠামো আছে কি? ওঁর যদি তেমন অসুবিধে হয়, তখন নিশ্চয়ই দেখা হবে।’ ইডি-র কৌঁসুলি বলেন, ‘মেডিক্যাল বোর্ডের ব্যাপারে কিছু বলার নেই। এইমসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। ফিট বলেছে।’ পার্থ নিজের অসুস্থতার কথা জানান। মরে গেলে আর বিচার করে কী হবে, সে প্রশ্নও তোলেন। পাশাপাশি বলেন, ‘মিডিয়া ট্রায়াল চলছে। আমি নিজে যদি আদালতে যেতে পারতাম, তা হলে ভালো হতো?’ তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি কি আসতে চান? তা হলে আবেদন করুন। আমি দেখছি।’ পার্থ বলেন, ‘আমি আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে জানাব। ভালো থাকবেন স্যর।’
অর্পিতার যুক্তি, ‘আমি উচ্চবংশের মেয়ে। আপনার কি মনে হয় না, সামাজিক সম্মান নষ্ট হচ্ছে?’ বিচারক প্রশ্ন করেন ‘আপনি জামিনের আবেদন করছেন না কেন?’ অর্পিতা বলেন, ‘আমার মা বয়স্ক। তাঁর পাশে থাকা প্রয়োজন।’ বিচারক ফের তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘আপনি উকিলবাবুর সঙ্গে কথা বলুন। আবেদন করলে নিশ্চয়ই ভেবে দেখা হবে।’