খোঁজ মিলছে না মেট্রোর পুরনো নকশার। তার ফলে কালীঘাটে স্কাইওয়াক নির্মাণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারদের। নবান্ন সূত্রের খবর, কালীঘাটে মাটির তলায় কতদূর পর্যন্ত মেট্রো স্টেশনের পিলার বিস্তৃত, তা জানতে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকে কলকাতা পুরসভার তরফে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেট্রোর আধিকারিকরা নকশা খুঁজে না পাওয়ায় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের মুখে স্কাইওয়াকের পিলার বসানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রকল্পের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করা নিয়ে সংশয় বেড়েছে।
পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, মাটির তলায় কোথা দিয়ে মেট্রোর লাইন রয়েছে, কতদূর পর্যন্ত মেট্রো স্টেশনের দেওয়াল–তার নকশা মেট্রো রেলের কাছেই থাকার কথা। এটা অনেকটা ‘গাইডবুকে’র মতো। মেট্রো লাইনের আশপাশে কোনও নির্মাণকাজ করতে গেলে ওই নকশা ধরেই কাজ করতে হয়। সেই মতো শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের পাশে স্কাইওয়াকের পিলার বসানোর আগে মাটির তলার নকশা দেখতে চেয়ে গত জুনে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে প্রথম চিঠি দেয় পুরসভা।
তার পর ছ’দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। মেট্রোর তরফে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। কালীঘাট স্কাইওয়াক নির্মাণ প্রকল্পে নিযুক্ত কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘আমরা মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁরা মৌখিক ভাবে আমাদের জানিয়েছেন, নকশা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সমস্যা হচ্ছে।’
পুর-আধিকারিকদের বক্তব্য, ভূমিকম্প, ধস কিংবা অগ্নিকাণ্ডের মতো বিপর্যয় মোকাবিলাতেও মেট্রোর নকশা গুরুত্বপূর্ণ। সেই নকশা না-পাওয়া খুবই গুরুতর। মেট্রোর ইঞ্জিনিয়াররা অবশ্য মুখ খুলতে রাজি হননি। মেট্রোরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, ফাইল না দেখে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না।
প্রস্তাবিত এই কালীঘাট স্কাইওয়াক শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের মুখ থেকে শুরু হয়ে টেম্পল রোড ধরে কালীঘাট মন্দিরের কাছে গিয়ে শেষ হবে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের মুখে স্কাইওয়াকে ওঠার জন্যে দু’দিকে সিঁড়ি উঠবে। একটা সিঁড়ি কালীঘাট হকার্স কর্নারের দিক থেকে। উল্টো দিক থেকে আর একটা। তার কিছু দূরেই মেট্রো স্টেশন। এখানে পিলার বসাতে হলে মেট্রোর অনুমোদন লাগবে। সে জন্যেই ছ’বার মেট্রোকে চিঠি দিয়েও সাড়া না মেলায় কয়েক দিন আগে কলকাতার পুর-কমিশনার বিনোদ কুমার নতুন করে মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি দিয়েছেন। তারও উত্তর আসেনি।
স্কাইওয়াক তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে পুরনো নিকাশি নালাও। যে রাস্তার উপর দিয়ে স্কাইওয়াক বানানো হচ্ছে, তার নীচে পুরনো নিকাশি নালা রয়েছে। তার ফলে পাইলিংয়ের কাজ করতে প্রতি পদে হোঁচট খেতে হচ্ছে ঠিকাদার সংস্থাকে। পুরসভার খবর অনুযায়ী, স্কাইওয়াক নির্মাণে মোট ৩১৯টি পিলার বসাতে হবে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ২৩১টি পিলার বসানো গিয়েছে। বাকি পিলার কবে বসবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না পুর-ইঞ্জিনিয়াররাও। ফলে ২০২৩-এর মধ্যে স্কাইওয়াকের কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।