ফের বিতর্ক মানিক ভট্টাচার্যকে নিয়ে। প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতিতে জেলবন্দি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসৃত সভাপতির আইন কলেজের অধ্যক্ষ-পদ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল হাইকোর্টে মামলায়। বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক মানিকের অধ্যক্ষপদে সেই নিয়োগ অবশ্য সিকি শতক আগের, বাম আমলে। আবার একই কলেজে নিয়োগ-দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে স্কুলে নিয়োগ-দুর্নীতিতে জেলবন্দি সুবীরেশ ভট্টাচার্যেরও।
মানিক ভট্টাচার্যের দক্ষিণ কলকাতার যোগেশচন্দ্র আইন কলেজের অধ্যক্ষ-পদ পাওয়া নিয়ে হাইকোর্টে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই কলেজেরই কিছু পড়ুয়া। তাঁদের অভিযোগ, বাম আমলে, ১৯৯৮ সালে মানিক-সহ চার জনকে বেআইনি ভাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল ওই কলেজে। এ নিয়ে ২০১৮-য় চারু মার্কেট থানায় অভিযোগও হয়েছিল। ২০২০-তে রাজ্য রিপোর্ট দিয়ে হাইকোর্টে জানায়, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সারবত্তা আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই তদন্তভার দেওয়া হয় লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগকে।
বর্তমানে ওই কলেজেরই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অচিনা কুণ্ডুর নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় বুধবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে ব্যক্তিগত হাজিরা ছিল সেখানকার বর্তমান অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েঙ্কার। তখনই ওই কলেজের পড়ুয়াদের তরফে অনেকের স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র পেশ করা হয়। যদিও আদালত ওই অভিযোগপত্র নিয়ে পদক্ষেপ করেনি। তবে পড়ুয়াদের মামলায় যুক্ত হয়ে বক্তব্য জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাযপর্যপূর্ণ হলো, পড়ুয়াদের অভিযোগ মানিকের সঙ্গে অচিনা, সুনন্দার নিয়োগ নিয়েও।
আর এক জন প্রয়াত। ঘটনা হলো, ১৯৯৮-র জুলাই পর্যন্ত বিজয়গড়ের স্কুলে শিক্ষকতা করতেন মানিক। আচমকা সে বছর অগস্টে তিনি কী করে আইন কলেজের অধ্যক্ষ হলেন, যা অধ্যাপক পদমর্যাদার, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। আবার ২০১৪-য় কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি করে সুনন্দাকে ওই আইন কলেজেই অধ্যক্ষ পদ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সে সময়ে ওই কমিশনের চেয়ারপার্সন সুবীরেশের বিরুদ্ধে। ২০১৬-য় প্রথমে শম্পা ভঞ্জ ও বুলবুল সরকার রায় নামে দুই অধ্যাপক মানিক, সুনন্দা, অচিনা-সহ চার জনের বেআইনি নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন।
আইনের নেট/স্লেট পরীক্ষা না-দিয়েই, স্নাতকে ৫৫ শতাংশও নম্বর না-পেয়ে অধ্যাপক পদে নিযুক্তির বিরুদ্ধেই মামলা। আবার সুনন্দার ক্ষেত্রে অভিযোগ, তিনি নেট/স্লেট পাশই করেননি! সেই মামলার রেশ ধরেই বর্তমানে বিচারপতি তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে অচিনার আর্জির শুনানি চলছে। এরই মধ্যে পড়ুয়াদের চিঠি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। সুনন্দার দাবি, ‘কে কী অভিযোগ করেছেন, জানি না। অভিযোগের উত্তর দিতেও বাধ্য নই। আদালতই যা বলার বলবে।’ আর আচিনার বক্তব্য, ‘যদি বেআইনি নিয়োগ হয়, সেটা কোর্ট দেখবে। পড়ুয়ারা নিয়োগকর্তা নয়। এই নিয়ে কিছু বলব না।’