চাকরির নিরাপত্তা কমেছে এই যুক্তিতে এবার শিক্ষকদের বিভিন্ন লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি অর্থাৎ অলিখিত ভাবে ঋণ দেওয়া বন্ধ করল বালুরঘাটের একটি সমবায় ব্যাঙ্ক। এই বিষয়টি সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলা জুড়ে। রাজ্যের ভুয়ো শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের ঘটনায় এবার বৈধ শিক্ষকরাও সামাজিক প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ছে। সামাজিক অমর্যাদার পাশাপাশি, সামাজিক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। অথচ এতদিন এই শিক্ষকেরাই ছিলেন সমাজের অন্যতম সম্মানীয় ব্যক্তি।
একাধিক মামলায় নিয়োগে অনিয়মের কারণে কলকাতা হাইকোর্টে নির্দেশে চাকরি বাতিল হয়েছে বা হচ্ছে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের। কিছু ক্ষেত্রে বাতিল হলেও, এখনও চলছে বাতিলের প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত দুর্নীতি খুঁজে চলেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি। আর এই কারণেই সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষককেরা। সাধারণত চাকরি পাওয়ার পর শুরু হয় বিবাহিত জীবন। তারপরেই প্রয়োজন পড়ে বাড়ি তৈরি সহ অন্যান্য প্রয়োজনেও ব্যাঙ্ক থেকে লোন নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
এতদিন চাকরিজীবীদের ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিতে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু শিক্ষকের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক গুলি সাধারণত বুঝে নিতে চাইছে, সেই শিক্ষকের চাকরি আইনত বৈধ কিনা। চাকরির স্থায়িত্ব বুঝতে শিক্ষকের নিয়োগ কতদিন আগে হয়েছে সে বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জানতে চাইছে ব্যাঙ্ক। ঠিক এইভাবেই বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বৈধ নিয়োগের শিক্ষকদেরও। যা শিক্ষকদের কাছে একরকম অপমানজনক।
জানা গিয়েছে, বর্তমানে যেসব শিক্ষকরা লোনের জন্য ব্যাঙ্কে আবেদন করেছেন তাদের লোন আটকে রাখা হয়েছে। সব তথ্য বারংবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মূলত যেই সব সালে নিয়োগ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেই সব ক্ষেত্রে শিক্ষকদের লোন দেওয়া বন্ধ রেখেছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকদের লোন আবেদনে বিশেষ চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
যদিও লোন না দিলে ব্যাঙ্ক চলবে না। কারণ, অনেক শিক্ষক লোন নিয়ে তা এখন পরিশোধ করতে পারছে না। এদিকে এই বিষয় নিয়েও সরব হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলি। অন্যান্য ব্যাঙ্কেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছিল সেই ক্ষেত্রে আন্দোলন করে সেই সমস্যা মেটানো সম্ভব হয়েছে। তবে এই ব্যাঙ্কের কথা সামনে এসেছে সম্প্রতি। এনিয়েও তারা আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছে শিক্ষক সংগঠন ।
এবিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাম শিক্ষক সংগঠন নেতা শঙ্কর ঘোষ জানান, ”শিক্ষকদের হয়রান না করে যাতে ব্যাঙ্ক লোন পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। অপরদিকে, শিক্ষা দফতরের দুর্নীতিতে যারা চাকরি পেয়েছেন, তার দায়ও সরকারের। ফলে সরকারকেই এই দায় নিতে হবে।”
এবিষয়ে অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শিক্ষক মহা সঙ্ঘের সদস্য শুভেন্দু বক্সী জানান, ”নিয়োগ দুর্নীতিতে যাদের নাম জড়িত, তাদের তো চাকরি যাচ্ছেই, কিন্তু যারা বৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন এই ঘটনায় তাদেরও প্রশ্ন চিহ্নের সামনে পড়তে হয়েছে। বৈধ শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে সামাজিক হয়রানি হতে হচ্ছে।”
Hooghly News: ‘চাকরি পেতে টাকা কেন একটা মিষ্টির প্যাকেট দিইনি’, দাবি টুম্পার
এবিষয়ে তৃণমূল শিক্ষা সেলের সদস্য তথা শিক্ষক বিপুল কান্তি ঘোষ জানান, ”ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সাধারনত ঋণ দেওয়ার দেওয়ার ক্ষেত্রে সিকিউরিটি বা কাগজপত্র দেখে নেয়। ঋণের বিষয়টি ব্যাঙ্কের ব্যাপার। ব্যাঙ্ক সবকিছু খতিয়ে দেখতেই পারে। তবে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মর্যাদাহানির কোন বিষয় নেই।”
অন্যদিকে দক্ষিণ দিনাজপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের সিইও তনুজ কুমার সরকার বলেন, ”শিক্ষকদের লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন তারা ৷ কারণ এমন অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাদের ঋণ দেওয়ার পর চাকরি বাতিল হয়ে গেছে। যার ফলে সেই ঋণের টাকা ব্যাঙ্ক পাচ্ছে না৷ তাই যেই সব সালে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেই সব শিক্ষকরা লোনের আবেদন করলেই ঋণ দেওয়া হচ্ছে না, আগে পুরোটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷”