তাই রোগনির্ণয় করে নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়ার বদলে চিকিৎসকরা একপ্রকার বাধ্য হয়েই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করছেন। ফলে তুলনায় সস্তা ও সুলভ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বা র্যাট কিটের দাবি উঠছে তাঁদের একাংশ থেকে। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, রাজ্যের ১২টি সরকারি (এর মধ্যে কলকাতায় নাইসেডের পাশাপাশি চারটি মেডিক্যাল কলেজে) এবং কলকাতার আটটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাইরাল প্যানেল টেস্ট হয়।
১ জানুয়ারি থেকে শ্বাসকষ্টের শিকার যে সব শিশু ও বৃদ্ধ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের ভাইরাল প্যানেল টেস্ট করে দেখা যাচ্ছে, প্রায় অর্ধেক সংক্রমণের নেপথ্যে রয়েছে অ্যাডিনোভাইরাস। পাশাপাশি রয়েছে আরএসভি (রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস) এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ’র নানা সাবটাইপ ভাইরাসও, যেগুলি মূলত শিশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ ছাড়াও ছোট-বড় নির্বিশেষে সংক্রমণ ছড়িয়েছে রাইনোভাইরাস, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের মতো একগুচ্ছ ভাইরাস।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, টেস্টের সুবিধা খুব বেশি জায়গায় না-থাকায় এবং তা ব্যয়বহুল হওয়ায় সঙ্কটজনক রোগী ছাড়া কারও পরীক্ষাটাই করা হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে এই টেস্টের খরচ ৯ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ এবং কিছু ক্ষেত্রে অ্যাডিনোভাইরাসের খুব ভালো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রয়েছে। কিন্তু সেই ওষুধের চেয়ে ঢের বেশি খরচ টেস্টের। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেস্ট না-করেই রোগীর লক্ষণ-উপসর্গ দেখে অনুমানভিত্তিক চিকিৎসা করতে হচ্ছে। সব রোগীর টেস্ট করা গেলে তার ফলাফল যে আরও ভালো হতো, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’
চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণে সিডোফোভির, ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ সংক্রমণে ওসেল্টামিভির খুব ভালো কাজ করে। কিন্তু সংক্রমণটা আদতে কী, সেটাই অধিকাংশ সময়ে জানা হয়ে ওঠে না। আর এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি বলছেন, ‘শুধুমাত্র খরচের কারণেই সিংহভাগ ক্ষেত্রে পরীক্ষাটা করা হয় না।
একমাত্র গুরুতর অসুস্থের চিকিৎসাতেই ভাইরাল প্যানেল টেস্ট করা হয়। এর বদলে যদি র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের (র্যাট) কিট থাকত, তা হলে সব রোগীর ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে জেনে নেওয়া যেত, কোন ভাইরাসের সংক্রমণে রোগী অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সত্যিই র্যাট বাজারে এলে, গোড়ায় কিছুটা ব্যয়বহুল থাকলেও পরে তার দাম কমে পাঁচ-সাতশো টাকায় দাঁড়াবে। ফলে চিকিৎসাও হবে অনেক সুনির্দিষ্ট।
ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলছেন, ‘র্যাট প্রথমে খরচসাপেক্ষ হলেও কিছুদিন পরে সুলভ ও সস্তা হবেই। কিন্তু সেখানেও মুশকিল হলো, ভাইরাল প্যানেল টেস্টের তুলনায় এই র্যাট টেস্টের সেনসিটিভিটি কম।’ মাইক্রোবায়োলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌগত ঘোষ জানাচ্ছেন, আগে আরটি-পিসিআর টেস্টও হাতেগোনা কয়েকটি জায়গাতেই হতো। কিন্তু করোনা অতিমারীর সময়ে প্রয়োজনের তাগিদে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা। বর্তমান ভাইরাল সংক্রমণের জেরে তাই আগামী দিনে র্যাট-ও বাজারজাত হবে, সেই আশা রাখাই যায়।