কিন্তু সেই টাকার উৎস কী, তা কিছুতেই জানাতে চাইছেন না কুন্তল। সেই প্রসঙ্গেই এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিশেষ এজলাসের বিচারক বিদ্যুৎ কুমার রায় কড়া মন্তব্য করেছেন। এ দিন কুন্তলের বিরুদ্ধে ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি তুলে ধরেন তাঁর দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সাড়ে ছ’কোটি টাকার লেনদেনের প্রসঙ্গ। ফিরোজের দাবি, এই টাকার একটা অংশ টলিউড তারকাদের জন্য খরচ হয়েছে। শর্ট ফিল্ম, মিউজিক ভিডিয়ো বানানোর নাম করে নিয়োগ দুর্নীতির টাকাও কাজে লাগানো হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, আরও ৪-৫ জন টলিউডের তারকা রয়েছেন যাঁদের সঙ্গে কুন্তলের লেনদেন হয়েছিল।
সওয়াল-জবাবে উঠে আসে বনি সেনগুপ্ত এবং সোমা চক্রবর্তীর প্রায় ১ কোটি টাকা ফেরতের প্রসঙ্গও। ইডির দাবি, জেরায় ওই দুজনই স্বীকার করে নিয়েছেন এই টাকা কুন্তলই তাঁদের দিয়েছিলেন। কিন্তু ইডির বক্তব্য, ‘এই টাকা-সহ ব্যাঙ্কের ওই সাড়ে ছ’কোটি টাকার উৎস কী, বার বার জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও উত্তর দেননি কুন্তল।’ কুন্তলের হয়ে তাঁর আইনজীবী দাবি করেন, কোনও নগদ টাকা তাঁর মক্কেলের বাড়ি থেকে পাওয়া যায়নি। ব্যাঙ্কে যে টাকার কথা বলা হচ্ছে তা তো সাদা টাকা! সোমাকেও কুন্তল যে টাকা দিয়েছেন তা সাদা টাকা, কারণ তা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত আয়করও কুন্তল দিয়েছেন।
আত্মপক্ষ সমর্থনে কুন্তলের এমন যুক্তি শুনেই উষ্মাপ্রকাশ করেন বিচারক। তাঁর প্রশ্ন, ‘এই টাকার উৎস কী?’ এই প্রশ্নের উত্তর কার্যত থতমত খেতে হয় কুন্তলের আইনজীবীকে। বিচারকের বক্তব্যের মূল নির্যাস, দু-পাঁচ হাজার টাকা নয়, কোটি কোটি টাকা কে কখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করল, তা তো যাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তিনিই জানবেন। চাকরি, ব্যবসা বা কোনও সম্পত্তি বিক্রি করে এই টাকা আনা হয়েছিল কি না, সেটা তো যাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা পাওয়া গিয়েছে তাঁরই জানানোর কথা।
কুন্তলের আইনজীবীর দাবি উড়িয়ে বিচারকের প্রশ্ন, ‘৫ কোটি টাকা অবৈধ ভাবে আয় করে ২ কোটি টাকা আয়কর দিলেই কি তা বৈধ হয়ে যায়?’ পাল্টা কুন্তলের আইনজীবী দাবি করেন, এই টাকার উৎস তদন্তকারীরা বের করুন! তা শুনে বিচারক বলেন, ‘আপনার অ্যাকাউন্টের টাকা কোথা থেকে এসেছে সেটা আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হবে। এটা তদন্তকারীরা বলবেন কেন?’ এরপরই তিনি বলেন, ‘আপনার ৫০টা বাড়ি, ১০টা গাড়ি থাকতেই পারে। কিন্তু তা কেনার জন্য কোথা থেকে টাকা এসেছে তার ব্যাখ্যাও আপনাকেই করতে হবে।’
আদালতের কাছে ইডির দাবি, ‘এই বিপুল টাকা তিনি নগদে পেয়েছেন, সে কথা জেরায় স্বীকার করেছেন কুন্তল। কিন্তু এর উৎস জানাতে চাননি।’ দুপক্ষের মতামত শোনার পর বিচারক কুন্তলকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।