শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে নেমে ধৃত অয়ন শীলের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশিতে পাওয়া নথির ভিত্তিতে ইডির আধিকারিকরা পুরসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির তথ্য পায়। ৬০টিরও বেশি পুরসভায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ করার জন্য জাল বিস্তার করেছিলেন অয়ন। যে তালিকায় নাম রয়েছে ব্যারাকপুর মহকুমার একাধিক পুরসভার। দমদমের তিনটি পুরসভা থেকে বরাহনগর, কামারহাটি, পানিহাটি বাদ নেই কেউ।
টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিয়োগের কাজ করার ক্ষেত্রেও বিপুল আর্থিক লেনদেন হয়েছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এ ক্ষেত্রে পুরসভারই কাউন্সিলার বা পুরকর্মীরাই এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন বলে সূত্রের খবর৷ সেই সূত্রেই উঠে এসেছে রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বীরভূমের এক নেতার নাম।
সূত্রের খবর, নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ পুরসভায় অয়নের সঙ্গে নিয়োগ কমিটির রফা হতো। সেখানেই ঠিক হতো পুরসভার কাউন্সিলার পিছু কতজন এবং অয়নের সংস্থা কতজনকে চাকরিতে নেবে। জানা গিয়েছে, কাউন্সিলারদের জন্য ১-২টি কোটা রাখা হতো। বাকিটা অয়ন ঠিক করতেন এবং সেখানেই চলতো মোটা টাকার লেনদেন।
সূত্রের খবর, পুরসভাগুলির সঙ্গে অয়নের সংস্থার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিরেক্টরেট অফ লোকাল বডির (ডিএলবি) তৎকালীন কয়েকজন আধিকারিকও মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন। যে ডিএলবির অনুমোদন ছাড়া পুরসভায় নিয়োগ কার্যত অসম্ভব। জানা গেছে, অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ পুরসভার কর্মচারী ইউনিয়নের ওই রাজ্য নেতাও পুরসভাগুলিকে চাপ দিতেন অয়নের সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য। কোনও পুরসভা রাজি না হলে কর্মচারী ইউনিয়নের ওই নেতার সূত্রে সেই পুরসভার প্রধানের কাছে রাজ্যের এক মন্ত্রীর তরফে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হতো বলেও খবর।
জানা গিয়েছে, বীরভূমের ওই তৃণমূল নেতা গত পুরসভা নির্বাচনে হাজির হয়ে যান উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটিতে। অনুব্রতর স্টাইলেই ভোটারদের গ্লুকোজ খাওয়াতে দেখা যায় তাঁকে। কামারহাটির কেন্দ্রে বুথের সামনে চেয়ার-টেবিল পেতে ভোটারদের গ্লুকোজ খাওয়াতে খাওয়াতে তিনি সগর্বে বলেছিলেন, ‘কামারহাটির মানুষকে ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল রাখতে গ্লুকোজ খাওয়াচ্ছি।’
২০১২ সালে বীরভূমের একটি নার্সিংহোমের মধ্যে রিভলভার উঁচিয়ে হুমকি দিতেও দেখা গিয়েছিল ওই নেতাকে। বিভিন্ন সময় তাঁকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দিলে প্রতিবারই বীরভূম জেলা তৃণমূল বলেছে, ওই নেতা তৃণমূলের কেউ নন। কিন্তু দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে তাঁকে সামনের সারিতেই দেখা যায়। তাঁর এক ছেলে উত্তর ২৪ পরগনার একটি পুরসভার কর্মী হিসেবেও চাকরি পেয়েছেন।