Kolkata News : ১ রুপিয়ায় ১ পাউন্ড, আমেরিকা থেকে আসা প্রথম বরফ দেখতে হুড়োহুড়ি পড়েছিল কলকাতায় – first ice in kolkata shipped from america boston city


গৌতম বসুমল্লিক

তখন ইংরেজ রাজত্ব। উচ্চপদস্থ রাজ কর্মচারী সহ কেরানিকুলের একটা অংশ, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং তাদের পরিবারবর্গ মিলিয়ে বহু ইংরেজ ও ইউরোপীয় লোক এ দেশে এসে বসবাস করছে পেটের তাগিদে। ভারত গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। ইউরোপের মতো ঠান্ডা এখানে পড়ে না। তাই শীতকালটা কোনওক্রমে কাটাতে পার‌লেও, গরমকালে খুবই কষ্ট হত এখানকার, বিশেষ করে কলকাতার ইউরোপীয় বাসিন্দাদের। বাড়ির ছাদে ভিজে খড় বিছিয়ে কিংবা জানালায় ভিজে খসখস জাতীয় পর্দা লাগিয়ে গরম হাওয়া থেকে বাঁচলেও সন্ধ্যাবেলা গলা ভেজাতে এক-দু’ পাত্তর ক্ল্যারেটের সঙ্গে পান করবার মতো একটু ঠান্ডা জল তো দরকার! চৈত্র-বৈশাখের সন্ধ্যাবেলা মাঝে মাঝে ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হলে কখনও কখনও এক-আধ টুকরো বরফ জুটলেও তাতে তো গ্লাসও ভরে না! কাজেই হা-হুতাশ করা ছাড়া গতি কী আর।

Kolkata Yellow Taxi : কলকাতার পরিচিতি অক্ষুণ্ন রাখতে উদ্যোগ, ঐতিহ্যবাহী হলুদ ট্যাক্সি বাঁচাতে পরিকল্পনা সরকারের
এর মধ্যে, ১৮১৪ সালের জুলাই মাস নাগাদ এমিলি শেক্সপিয়ার নামের এক অভিজাত মহিলা মুর্শিদাবাদের নবাববাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে বরফের দেখা পেয়েছিলেন বলে জানালেন। ব্যাস, সাহেবদের লোভ গেল বেড়ে। শেষে অনেক তদ্বির-তদারকি করে হুগলিতে একটা বরফ চাষ আরম্ভ হল। কিন্তু, সেটা হুগলিতে কেন? তার কারণ হল, হুগলির ভৌগলিক বৈশিষ্টের কারণে এক বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে জলতে বরফের মতো তৈরি করা যেত। এবং সেই বরফ নদীপথে সাবধানে কলকাতায় আনা হত। তবে ওই পদ্ধতিতে তৈরি বরফ খুবই দামি হত এবং কলকাতার অভিজাত ইংরেজ পরিবার ছাড়া আর কেউ ব্যবহারও করতে পারত না সে বরফ।

সে ভাবেই চলছিল সাহেবদের বরফ খাওয়া। হঠাৎ এক দিন কলকাতার এক ঘাটে নোঙর করল আমেরিকার বস্টন শহর থেকে আসা এক জাহাজ। দিনটা ছিল ১৮৩৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। ‘টাসকানি’ নামের সে জাহাজের খোলে ছিল প্রায় ৯০ টন বরফ।

Calcutta Municipal Corporation : ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে পুলিশ নিয়ে তৈরি পুরসভা
খবর ছড়িয়ে পড়তে দেরি হল না। হইহই করে লোকে ছুটতে লাগল বরফ চেখে দেখতে। আর এক রুপিয়ায় এক পাউন্ড ওজনের বরফখণ্ড কেনার ক্ষমতা যাদের নই, তারা ভিড় করল শুধু চোখে দেখতে। সারা শহরের অফিস-কাছারি বন্ধ হয়ে গেল বরফ দেখার হুজুগে! এক বেলার মধ্যেই শেষ হয়ে গেল জাহাজভর্তি বরফ। খানিক বিক্রি হয়ে আর খানিক কলকাতার গরমে গলে জল হয়ে।

ফেড্রিক টিউডর নামে বস্টনের এক যুবক বোস্টন ও তার আশেপাশের বিভিন্ন জলাশয়ে জমে থাকা স্বচ্ছ বরফ তাপ নিরোধক জাহাজে করে প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায়, পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি আরম্ভ করেন। তেমন করেই ‘টাসকানি’ নামের ওই জাহাজের খোলে প্রায় ১৮০ টন বরফ পোরা হয়েছিল কিন্তু প্রায় ১৬-১৭ হাজার জলপথ ঘুরে সে বরফ যখন কলকাতায় পৌঁছল, তখন তার অর্ধেকই গলে জল হয়ে গিয়েছে।

Thika Property In Kolkata : ১৫ দিনে ঠিকা প্রজাদের বাড়ি তৈরির অনুমোদন, তৎপর মহানাগরিক ফিরহাদ
যাই হোক, শুধু এক দিন চেখেই তো আর আশ মিটবে না। তাই জাহাজের ক্যাপ্টেন রোজার্সকে সংবর্ধনা দেওয়া হল কলকাতায়। সেই সভায় তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিক ক্যাপ্টেনের হাতে রুপোর কাপ তুলে দিয়ে তাঁকে আরও বরফ নিয়ে আসার অনুরোধ জানালেন।

সমস্যা হল, বরফ ক্ষণস্থায়ী। ভারতের মতো দেশে গরমে তা ঝট করে গলে যায় তাই শহরবাসীর অনুরোধে লর্ড বেন্টিঙ্কের উদ্যোগে কলকাতায় তৈরি হল বরফ-ঘর বা ‘আইস-হাউস’। আজকের ভাষায় যাকে বলে কোল্ড স্টোরেজ।

Sanitary Napkin : শরীরে বদ রক্ত থাকলে…, স্যানিটারি প্যাডে আর্ট ওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিবাদ চিত্রশিল্পীর
বিষয়টা এখানেই থেমে রইল না। কলকাতা ছাড়াও তৎকালীন বোম্বে, মাদ্রাজেও বরফ আসতে লাগলো জাহাজে করে। সরবরাহ যত বাড়তে লাগলো, বরফের দামও তত কমতে লাগলো। মাত্র এক পাউন্ড ওজনের যে বরফ একদিন এক টাকা দামে বিক্রি হয়েছিল।কলকাতায় বরফ-ঘর তৈরি হওয়ার পর সরকার এক সের বরফ মাত্র দু’আনা দামে ফিরি করতে আরম্ভ করে।

Kolkata Metro : রোজ ১ লক্ষ যাত্রী বহনে তৈরি হচ্ছে বিমানবন্দর মেট্রো স্টেশন
প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ভারতে ওই বরফ আমদানি হয়ে এসেছে। পরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বরফ তৈরির কারখানা স্থাপিত হতে থাকলে, ১৮৭০-এর দশকের শেষ দিকে থেকে আমেরিকা থেকে বরফ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *