রেল লাইনের পাশে মায়ের ছোট্ট একটি চায়ের দোকান, বাবা রং মিস্ত্রি। সংসারে অভাব থাকলেও স্থানীয় এক কোচের হাত ধরে সব প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে গত আট বছর ধরে ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলেছেন উত্তর ২৪ পরগনার গুমার নেতাজি নগরের বাসিন্দা বছর ১৭- এর কিশোরী মন্দিরা মণ্ডল।
ফুটবল এখন তাঁর জীবনে ধ্যান- জ্ঞান – বন্ধু। এর আগে ফুটবল পায়ে নিয়ে জাদু দেখিয়েছিলেন গুমার মেয়ে বিপাশা। এবার সেই গুমাতেই দেখা মিলল নতুন তারকার! মন্দিরা মণ্ডল গুমা নজরুল বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মা লক্ষ্মীদেবীকে ছোটবেলা থেকেই লড়াই করে সংসার সামলাতে দেখছেন তিনি।
গুমা ১ নম্বর প্লাটফর্মে রেল লাইনের পাশেই চায়ের দোকান সামলান লক্ষ্মীদেবী। অভাবের সংসারে নিজের মেয়ের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়েই স্থানীয় কোচ সুব্রত রায়ের ফুটবল কোচিং সেন্টারে তাঁকে ভর্তি করার তিনি। মন্দিরার ফুটবল জাগলিং দেখতে এখন ভিড় করেন ট্রেন যাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয়রা।
আঙুলে বল ঘোরানো থেকে শুরু করে, বল নিয়ে লাফ দড়ি খেলা, বলের উপরে দাঁড়িয়ে অপর বল মাথায় রেখে স্টান্ট দেখাতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন ১৭ বছরের মন্দিরা। অভাবের মধ্যেও মন্দিরাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তাঁর চা বিক্রেতা মা। মন্দিরাও জানিয়েছেন, ফুটবল জাগালার হিসেবে গিনেস বুকে নাম ওঠানোর স্বপ্ন নেই। কিন্তু, অভাবের সংসারে মা-বাবার পাশে দাঁড়াতে চান তিনি।
মন্দিরা বলেন, “আমি বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। অনেক বাধা বিপত্তি পার করতে হয়েছে আমাকে। স্যার দীর্ঘদিন ধরেই পাশে রয়েছেন। আমার অন্যতম অনুপ্রেরণা বিপাশাদি। আমি তাঁর মতো হতে চেয়েছি বরাবর।”
মন্দিরার মা লক্ষ্মীদেবী বলেন, “আমার স্বামী ওর ফুটবল খেলার পক্ষে ছিল না। কিন্তু, আমার খেলাধূলোর প্রতি আগ্রহ ছিল। আমার স্বপ্নগুলো কোনওদিন পূরণ হয়নি। কিন্তু, আমার মেয়ের ইচ্ছেগুলোকে কোনওদিন দমিয়ে রাখব না। ওর কোচ পাশে রয়েছেন। আমিও আছি। ওর খেলার জন্য যাবতীয় চাহিদা প্রয়োজনিয়তা মেটানোর চেষ্টা করি।”মন্দিরার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁর প্রতিবেশীরাও।