Alipurduar News : পিঠ চুলকাতে ভুট্টাখেতে ঢুকছে গন্ডার! কৃষকদের সাড়ে সর্বনাশ – rhinoceros entering the corn field and destroyed in alipurduar


পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার:
কথায় বলে, গন্ডারের চামড়া। প্রবাদের ব্যাখ্যায় বলা হয়, সে চামড়া নাকি এতটাই মোটা যে, আঘাত করলে গন্ডার টের পায় এক দিন পর। এ বার সেই মোটা চামড়া চুলকোতেই ভুট্টা খেতে হানা দিচ্ছে গন্ডাররা। আর তাতেই সর্বনাশ হচ্ছে চাষিদের। আলুচাষে ক্ষতি হওয়ায় সামান্য লাভের আশায় এই প্রথম ভুট্টা চাষ করেছিলেন চিলাপাতা বনবস্তির বাসিন্দারা।

Elephant Attack : হাতির আক্রমণ রুখতে নয়া উদ্যোগ রাজ্যের, চালু হচ্ছে ‘খাদ্য ভাণ্ডার’
স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, লাভের আশায় কী বিপদ ডেকে আনছেন! দিন পনেরো ধরে সেই ভুট্টা খেতে ঢুকে পড়ছে গন্ডাররা। না, পেট ভরাতে নয়। ভুট্টা গাছের পাতার দু’ধার অত্যন্ত ধারালো হয়। তাতেই নাকি গা ঘষতে ভালোবাসে গন্ডাররা। যার ফলে অন্ধকার নামতেই জঙ্গল ছেড়ে বনবস্তির ভুট্টা খেতে চলে আসছে একশৃঙ্গরা। গা ঘষে খানিক আরাম হতেই এর পর ধীরেসুস্থে খেতের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে নিশ্চিন্তে।

Elephant In Buxa Forest : ত্রাস ছড়ানো দাঁতাল এখন কোথায়? উদ্বিগ্ন বনকর্তারা
না, খেত তছনছ করার মতো কোনও দুরভিসন্ধি দেখা যাচ্ছে না তাদের মধ্যে। কিন্তু যত সদিচ্ছা নিয়েই ভুট্টাখেতে ঢুকুক না কেন, তাদের বিশাল বপুর জন্যই জমির মাঝখান দিয়ে তৈরি হচ্ছে গলিপথ, কখনও ওজনের চাপে তৈরি হচ্ছে গর্তও। ফলে দফারফা হচ্ছে বিঘার পর বিঘা ভুট্টা খেতের।

জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও দীপক এম বলেন, ‘বনের ভেতরের উঁচু ও শক্তপোক্ত গাছে হাতি ও গন্ডারদের গা ঘষতে প্রায়শই দেখা যায়। ফলে ভুট্টা গাছের ধারালো পাতায় গন্ডারের গা ঘষাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। চিলাপাতা বনবস্তিতে প্রতি রাতে চলে আসা গন্ডারগুলির এই অভ্যাস ভাঙতে তাদের উত্তরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’

Birbhum News : গাছের ডালেই ঝুড়ি বেঁধে রাখা ফল-জল, দলছুট বাঁদরের পাশে এলাকাবাসী
তবে বন দপ্তর সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগেই জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া চিলাপাতা বনবস্তির বাসিন্দারা গন্ডারের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। রীতিমতো প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দল বেঁধে, শুধুমাত্র টর্চের আলোর উপর নির্ভর করে ইট-পাটকেল ছুড়ে গন্ডার তাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। তাতে যে কোনও মুহূর্তেই বড় বিপদ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কায় ঘুম উবেছে বনকর্তাদের।

Drinking Water Crisis : গ্রামের তিনটি নলকূপই খারাপ, কিনে খেতে হচ্ছে জল! ক্ষোভ স্থানীয়দের
উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর বলেন, ‘ভাবতে পারছেন, ঢিলের আঘাতে ক্ষিপ্ত হয়ে একবার যদি গন্ডার প্রতি-আক্রমণের পথ নিয়ে ফেলে, তবে কতটা বিপদ হতে পারে? কিন্তু মানুষকে বোঝাতে গিয়ে আমরা বারবার ব্যর্থ হচ্ছি।’

স্থানীয় কৃষকরা বুঝছেন না, এমন নয়। কিন্তু তাঁরাও অসহায়। এঁদেরই একজন, আবু আলম বলছিলেন, ‘এত দিন হাতির সঙ্গে অসম লড়াই চালিয়ে আসছিলাম। তাতে ফসলের ক্ষতি, প্রাণহানি সবই হয়েছে। হালে শেষ পনেরো দিনে গন্ডারের হানায় আমরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় শেষে সবাই পাল্টা আক্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছে। তাতে যে কোনও সময়ে বিরাট বিপদ ঘটতে পারে।’

Purulia School : শিক্ষকদের দেখা নেই, খেলাধূলা করেই সময় কাটায় পুরুলিয়ার এই স্কুলের পড়ুয়ারা
আরও এক প্রবীণ কৃষক তাহের আলি বলেন, ‘প্রায় সারাটা জীবন হাতির সঙ্গে লড়তে লড়তে বুড়ো হয়ে গেলাম। তবে গন্ডারের এমন উৎপাত আগে দেখিনি। বন দপ্তরের কাছে আমার অনুরোধ, আমরা যাতে পেটে-ভাতে মরে না যাই, সেই দিকটায় বনকর্তারা দয়া করে একটু নজর দিন।’

ন্যাফ মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু এমন নজির আগে কখনও চোখে পড়েনি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *