বিচারপতি টিএস শিবাগ্ননমের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ যখন ৮৬ জনের তালিকা দেখে সভাপতি-সহ বার অ্যাসোসিয়েশনের ভূমিকা নিয়ে কড়া মন্তব্য করছে, তখন এজলাসের বাইরে শাসকদলের অনুগামী আইনজীবীদের একাংশ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন। মূলত কাদের নাম ওই তালিকায় রয়েছে, বারের শীর্ষ পদাধিকারীদের কাছে তা জানতে চেয়ে চিৎকার করতে থাকেন তাঁরা। যা এজলাসে বসে শুনে নির্দেশ ঘোষণা করতে গিয়ে থমকাতে হয় বিচারপতিদেরও। বয়কটপন্থী জুনিয়রদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে বারের শীর্ষকর্তাদেরও বিকেলে বৈঠক করে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিতে হয়।
বিশাল তালিকা দেখে বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষকে বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ বিরক্তির সঙ্গেই প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি আদালতকে ভয় পান না? সম্মানও করেন না? আমরা দেখেছি এজলাসে আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দেওয়ায় ১০ থেকে ১২ জন যুক্ত ছিলেন। আমরা চাইলেই কড়া পদক্ষেপ করতে পারি। সবার অবস্থা এখন পিতামহ ভীষ্মের মতো, সবাই অবিচার দেখেছেন, কিছু করতে পারছেন না। আদালতকে দুর্বল ভাববেন না।’
বিচারপতি টিএস শিবাগ্ননমের পর্যবেক্ষণ, ৮৬ জন আইনজীবী কখনওই আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলেন না। বিচারপতিদের বক্তব্য, আমরা চাই প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষা করতে, কিন্তু সত্যিটা সামনে আসা দরকার। আমরা চাইলেই আদালত অবমাননার রুল জারি করতে পারি। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘সংশ্লিষ্টরা ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আমরা এই সমস্যার সম্মানজনক সমাধানও করতে পারি। অযথা বিষয়টা জটিল করা হলো।’
আদালতের স্পষ্ট বার্তা, রাজ্য বার কাউন্সিল আদালতকে সাহায্য না করতে পারলে জাতীয় বার কাউন্সিলের সাহায্য নেওয়া হবে। তখন সিদ্ধান্ত তাদের হাতে থাকবে। বিচারপতি শিবাগ্ননমের মন্তব্য, ‘রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হাতজোড় করে তাঁদের (এজলাস বয়কটকারীদের) সরে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। বিক্ষোভকারীরা শোনেননি। এর থেকে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে!’ আদালতের নির্দেশ, রাজ্য বার কাউন্সিল এ বার বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের শনাক্ত করবেন।
জাতীয় বার কাউন্সিলের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান করতে হবে। দু’টি সংস্থা আলাদা আলাদা রিপোর্ট পেশ করবে। অন্য দিকে বিচারপতি মান্থার বাড়ি ও হাইকোর্ট এলাকায় পোস্টার লাগানোর ঘটনায় ৬ সন্দেহভাজনকে এ দিন হাজির করে পুলিশ। তাঁদের বক্তব্য হলফনামা আকারে জমা দিতে বলেছে আদালত। পুলিশ জানায়, দু’টি প্রেস থেকে বিতর্কিত পোস্টার ছাপা হয়েছিল। সম্পূর্ন নিশ্চিত হওয়ার জন্যে ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। পুলিশ তদন্তে অযথা বিলম্ব করছে বলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি শিবাগ্ননম।