রক্ত দিতে নিজেই শুয়ে পড়েন বেডে। এর পর উৎসাহিত করেন সঙ্গে থাকা সরকারি আধিকারিক এবং পুলিশকর্মীদেরও। রক্তের আকাল মেটাতে রক্তদানে এগিয়ে আসেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাই। আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের ঘটনা। রক্তশূন্য ব্লাডব্যাঙ্কের দশা দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যান মহকুমা শাসক।
তিনি বলেন, ‘সরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক রক্তশূন্য থাকবে? এটা ভাবা যায়? ঘটনাটি চোখে পড়া মাত্রই আর কালবিলম্ব করিনি। কারণ চা-বলয়ের মধ্যে থাকা ওই হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসেন গরিব চা-শ্রমিকরা। রক্তের সঙ্কটে যদি কারও প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন তার দায় সরকারের উপরেই পড়বে। সেই কারণেই এক জন সরকারি আধিকারিক হিসেবে আমার কর্তব্য পালন করেছি।’
তবে এ দিন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম অস্বস্তিতে পড়েন বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। তাঁদের রীতিমতো বিব্রত হতে হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফাই, ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত মজুত থাকলেও, ওই প্যাকেটগুলি পরীক্ষা না হওয়ায়, সেগুলো ডিসপ্লে বোর্ডে উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু হাসপাতালের এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি মহকুমাশাসক।
হাসপাতাল সুপার কৌশিক গড়াই বলেন, ‘বুধবার সন্ধের মধ্যেই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত মজুত করা হবে।’ ওই ঘটনার পরেই সরকারি হাসপাতাল থেকে আয়া তাড়ানোর অভিযানে নামেন মহকুমাশাসক। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে তাড়িয়ে দেন মোট ১৩ জন আয়াকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কড়া নির্দেশ দেন যে, যদি তারপরেও ওই আয়ারা হাসপাতালে ঢোকার চেষ্টা করেন, তৎক্ষণাৎ যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। মহকুমাশাসক বিপ্লব সরকার বলেন, ‘রাজ্য সরকার যখন সরকারি হাসপাতালগুলি থেকে আয়ারাজ হটাতে কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন সরকারি হাসপাতালে আয়ারা দৌরাত্ম চালাবেন কেন? সরকারি হাসপাতালে তো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথা। তাই এই ধরনের বেনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।’