Jhargram News : ‘দুষ্টু’ হাতিকে ফেরাতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে বনকর্তারা – foresters faced protest while returning the elephant in jhargram


এই সময়, ঝাড়গ্রাম: চারদিন আগে বেলপাহাড়িতে হাতির হানায় বেঘোরে প্রাণ গিয়েছিল তিনজনের। সেই ক্ষত এখনও পুরোপুরি সারেনি। তার আগেই বনদপ্তরের এক নতুন সিদ্ধান্ত যেন কাটা ঘায়ে নুন ছিটিয়ে দিল। মঙ্গলবার রাতে চুপিসারে এক ‘দুষ্টু’ হাতিকে বেলপাহাড়ির জঙ্গলে ছাড়তে গিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখ পড়লেন বনদপ্তরের কর্তারা। শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচতে হাতি সমেত গাড়ি ঘুরিয়ে ঝাড়গ্রামে ফেরত নিয়ে আসেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীরা।

Gopegarh Eco Park : দুষ্টু হাতিকে বাগে আনতে গিয়ে জখম বন দফতরের আধিকারিক
পুলিশ-প্রশাসনকে না জানিয়ে জঙ্গলে হাতিকে ছাড়তে যাওয়ার ঘটনায় বনদপ্তরের ‘কাণ্ডজ্ঞানহীনতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপগড়ে ঘুমপাড়ানি গুলি করে বাগে আনা হয় একটি দুষ্টু হাতিকে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ বনদপ্তরের গাড়িতে গোপগড়ে ধরা হাতিটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বেলপাহাড়ি ব্লকের ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী ঢাঙিকুসুমের জঙ্গল লাগোয়া এলাকায়। খাট্টাধরা গ্রামে বনদপ্তরের গাড়িতে হাতিটিকে বাঁধা অবস্থায় দেখেই সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের।

Jhargram Elephant Attack : হাতির হানায় মৃত ৩, এক সপ্তাহে মোট ৭! আতঙ্ক ঝাড়গ্রামে
বনকর্মীদের কাছ থেকে বাসিন্দারা জানতে পারেন সেই হাতিকে ঢাঙিকুসুমের পাশের জঙ্গলে ছাড়া হবে। বিষয়টি জানাজানি হতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন শিমূলপাল ও ভুলাভেদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার লোকেরা। জঙ্গলে হাতি ছাড়ার বিষয়ে স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটিকেও জানানো হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।

Mamata Banerjee : হাতি রুখতে মমতার কাছে আট দফা দাবি
কিছুক্ষণের মধ্যে ঢাঙিকুসুম, চিড়াকুঠি, বুড়িঝোর, শিমূলপাল, ভুলাভেদা, খাট্টাধরা, ওদলচুয়া, মাকড়ভুলা, কাঁকড়াঝোর সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা বদাডি মোড়ে জমায়েত শুরু করেন। সেখান থেকে ওদলচুয়া বিট অফিসে গিয়েও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। সেই বিক্ষোভের জেরে অন্য এলাকায় হাতি তাড়াতে যাওয়া কাঁকড়াঝোর ও শিলদার বিট অফিসারদের গাড়িও আটকে যায়।

গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ‘গত ২৪ মার্চ বনদপ্তর আগাম প্রচার না করায় হাতির হানায় তিনজনের মৃত্যু হয়। এরপরেও রাতের অন্ধকারে চুপিসারে কেন একটি দুষ্টু হাতিকে জঙ্গলে নিয়ে আসা হলো? এখানে কি মানুষ বসবাস করে না? বনদপ্তর আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল হাতি তাড়ানো বা এরকম কোনও কাজ হলে গ্রামবাসীদের জানিয়ে তা করা হবে।

Elephant Attack : হাতির আক্রমণ রুখতে নয়া উদ্যোগ রাজ্যের, চালু হচ্ছে ‘খাদ্য ভাণ্ডার’
তাহলে কেন প্রতিশ্রুতিভঙ্গ করা হলো?’ শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ ঝাড়গ্রামের এডিএফও বলরাম পাঁজার সঙ্গে গ্রামবাসীদের ফোনে কথা বলানোর পরে পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এডিএফও আশ্বাস দেন, হাতিটিকে জঙ্গলমহল জুওলজিক্যাল পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানকার একটি ভিডিয়ো গ্রামবাসীদের দেখানোর পরে বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়।

ঘটনার কথা স্বীকার করে পুলিশ জানিয়েছে, বেলপাহাড়ির জঙ্গলে হাতি ছাড়া নিয়ে বনদপ্তর তাদের আগাম কোনও বার্তা পাঠায়নি। বেলপাহাড়ির এসডিপিও উত্তম গরাই বলেন, ‘চারদিন আগেই হাতির হানায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। তার মধ্যে এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে বনদপ্তর হাতি নিয়ে জঙ্গলে ছাড়তে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে। মঙ্গলবার গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে রাত দু’টো নাগাদ দুই বিট অফিসারকে আমরা বদাডি থেকে উদ্ধার করি।’

Elephant Attack Death : ঝাড়গ্রামের পর এবার পশ্চিম মেদিনীপুর, হাতির হানায় ২ মহিলার মৃত্যুতে উদ্বেগ বাড়ছে বন দফতরের
জানা গিয়েছে, রাতে গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে বনদপ্তরের একটি গাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে হাতিটিকে তড়িঘড়ি ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুওলজিক্যাল পার্কে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতত সেখানেই চিকিৎসা হচ্ছে ওই হাতির। ঝাড়গ্রামের ডিএফও শেখ ফরিদ বলেন,’অনেকেই বেলপাহাড়ির জঙ্গলে হাতিটিকে ছাড়ার জন্য আপত্তি জানিয়েছিল। তাই চিকিৎসার জন্য জঙ্গলমহল জুওলজিক্যাল পার্কে নিয়ে এসে রাখা হয়েছে।’

মুখ্য বনপাল(পশ্চিম চক্র) অশোকপ্রতাপ সিং বলেন, ‘বনকর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনায় বেলপাহাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশকে প্রথমে হাতি ছাড়ার বিষয়টি জানানো হয়নি। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় পুলিশকে জানানো হয়।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *