কঙ্কালসার দেহ, নিজে হাঁটার ক্ষমতাটুকু হারিয়েছেন। প্রয়োজন পড়ে সাহায্যের। পায়ে ছোপ ছোপ দাগ-ঘা হাঁটু পর্যন্ত। মাঝে মধ্যে চামড়া ফেটে পড়ে রক্ত। কিন্তু, ‘বিচার’-এর প্রত্যাশা আর তিনি করেন না, এমনটাই দাবি করেছেন সেই প্রবীণ।
সিঙ্গুরের তাপসী মালিককে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল তৎকালীন বাম নেতা সুহৃদ দত্ত। এরপর দীর্ঘদিন কেটে গিয়েছে। এখনও চলছে মামলা। তাপসী মালিকের ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সুহৃদ দত্ত এখন বয়সের ভারে কাবু। তিনি সেই সময় দাবি করেছিলেন, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।
এরপর বছর ঘুরেছে। জামিনে মুক্ত সুহৃদ। মামলা চলছে কোর্টে। এদিকে সুহৃদের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। পা জুড়ে ঘা। মাঝে মধ্যে সেখান থেকে রক্ত পড়ে। নিজে হাঁটাহাটির ক্ষমতাটুকু হারিয়েছেন। একদা সিঙ্গুরের দাপুটে এই বাম নেতা ভাঙা গলায় বললেন, “আমি ভালো নেই। পায়ের অবস্থা ভালো নয়।”
দলের বিরুদ্ধে কোনও অভিমান পুষে রাখেননি তিনি। সুহৃদ বলেন, “দলের অনেকেই এখনও মাঝে মধ্যে খোঁজ নেয়। তাঁরা যোগাযোগ রাখেন।” এই প্রবীণ ভাঙা ভাঙা গলায় বলেন, “যদি সত্যিই ন্যায় বিচার হয় সেক্ষেত্রে আমার কোনও আপত্তি নেই। আপত্তি থাকার প্রশ্নও ওঠে না।”
সিঙ্গুর আন্দোলনের পর রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর বদল এসেছে। সরকার বদলেছে। তৃণমূল সরকার প্রসঙ্গে সুহৃদ বলেন, “এই সরকার ঠিক কী চায় তারাই জানে না। সরকার চুপচাপ বসে রয়েছে। আমাদের সময়কার সিঙ্গুর আর এখনকার সিঙ্গুরের অনেক তফাত। সেই সময় মানুষের মধ্যে কাজ করার ইচ্ছে ছিল, প্রত্যাশা ছিল এখন আর নেই।”
তাঁর সংযোজন, “টাটারা এখান থেকে চলে যাওয়ার পরেই পুরো চুপচাপ এখানকার লোকজন।” লাল পতাকা আজও বুকে জড়িয়ে রাখেন সুহৃদ। তিনি বলেন, “আজও ওই রংটা বিরাট প্রিয়।” নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করে এই প্রবীণ বলেন, “আমাকে যখন প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ছাড়া হল সেই সময় মানুষের ঢল নেমেছিল। আর মানুষের ঢলই সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছিল।”
কোনও প্রত্যাশায় বুক বাঁধতে রাজি নন তিনি। সুহৃদ বলেন, “আমি কিছু আশা করছি না।” তিনি আরও বলেন, “মানুষ মিথ্যে কথা বলায়। চারিদিকে মিথ্যা আর মিথ্যা দেখেছি। আমি নতুন করে প্রত্যাশা করতে ভয় পাই। সত্যি কি কিছু হবে! আর কি কিছু হওয়া বাকি!”