Swami Prabhananda Maharaj : দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে অসংখ্য ভক্ত, জানুন সুবক্তা স্বামী প্রভানন্দ মহারাজের জীবনগাথা – ramakrishna math and mission vice president swami prabhananda maharaj was a teacher of narendrapur has many followers in india and abroad


স্বামী প্রভানন্দ মহারাজকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ভক্তরা বেলুড় মঠে ছুটে এসেছেন। সকলেই শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন পূজনীয় মহারাজকে। স্মৃতিচারণায় বেলুড় মঠের স্বামীজিরা। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৫০ মিনিটে কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহারাজ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

১৭ অক্টোবর, ১৯৩১ সালে স্বামী প্রভানন্দ অধুনা বাংলাদেশের তিপ্পেরা জেলার আখাউড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের সপ্তম অধ্যক্ষ স্বামী শঙ্করানন্দ মহারাজের থেকে তিনি দীক্ষা লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে যোগদান করেন নরেন্দ্রপুর আশ্রমে। ১৯৬৬ সালে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের দশম অধ্যক্ষ স্বামী বীরেশ্বরানন্দ মহারাজের থেকে দীক্ষা নিয়ে তিনি সন্ন্যাস জীবনে প্রবেশ করেন।

আরও পড়ুন : Ramakrishna Mission Vice President Death : প্রয়াত স্বামী প্রভানন্দ মহারাজের ভাণ্ডারায় অনুদান দিতে ইচ্ছুক? ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

নরেন্দ্রপুর, সারদাপীঠ ও সেবা প্রতিষ্ঠানে তিনি নানা সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নরেন্দ্রপুরে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরূপে কিছুকাল সেবা করেন। নরেন্দ্রপুরে থাকাকালীন দুই বছর তিনি Institute of Social Education and Recreation (বর্তমানে লোকশিক্ষা পরিষদ)–এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠের অন্তর্গত বিদ্যামন্দির কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন বেশ কয়েকবছর।

কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের সহকারী সম্পাদকরূপে তিনি তিন বছর সেবা করেন। পরবর্তীকালে প্রভানন্দ মহারাজ পুরুলিয়া বিদ্যাপীঠ এবং দক্ষিণ কলকাতায় অবস্থিত Ramakrishna Mission Institute of Culture–এর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রভানন্দ মহারাজ রামকৃষ্ণ মঠের অছি পরিষদ ও রামকৃষ্ণ মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সাল থেকে বদীর্ঘ ১১ বছর তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এই পদ তিনি অলংকৃত করেন পরবর্তী পাঁচ বছর। ২০১২ সালের জুন মাসে প্রভানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহ সঙ্ঘাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

আরও পড়ুন : Ramakrishna Mission Belur Math : রামকৃষ্ণ মিশনের নবতিপর সহ-সভাপতি স্বামী প্রভানন্দর জীবনাবসান
ইংরাজি এবং বাংলা ভাষায় বহু গ্রন্থের রচনা করেন স্বামী প্রভানন্দ মহারাজ। এই তালিকায় উল্লেখ্যযোগ্য শ্রীরামকৃষ্ণের অন্ত্যলীলা (দুই খণ্ডে), ব্রহ্মানন্দ চরিত, সারদানন্দ চরিত ও রামকৃষ্ণ মঠের আদিকথা। ইংরাজি ভাষায় তাঁর লেখা First Meetings with Sri Ramakrishna এবং Early History of Ramakrishna Movement শীর্ষক গ্রন্থাবলী অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর লেখা ইংরাজী ও বাংলা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

বরাবরই সুবক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন প্রভানন্দ মহারাজ। বহু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। মহারাজের সুচিন্তিত বক্তৃতাবলী তাঁর মেধা ও পাণ্ডিত্যের সাক্ষ্য বহন করে। বেলুড় মঠে অবস্থিত রামকৃষ্ণ সংগ্রহ মন্দিরটিতে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ভাবান্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বহু মূল্যবান জিনিস ও নথিপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। এটি স্বামী প্রভানন্দের একক প্রচেষ্টা ও দীর্ঘকালীন শ্রমের নিদর্শন।


সহ-সঙ্ঘাধ্যক্ষরূপে প্রভানন্দ মহারাজ ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের বিভিন্ন স্থলে গিয়ে বহু অধ্যাত্ম পিপাসু মানুষকে দীক্ষা দিয়েছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া, ফিজি, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকা পরিদর্শনে যান এবং রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ভাবধারা ও বেদান্তের প্রচার-প্রসার করেন।

স্বামী প্রভানন্দের জ্ঞানস্পৃহা ও গবেষণাস্পৃহা সর্বজনবিদিত। তাঁর অসাধারণ মেধা, পাণ্ডিত্য, সেবাপরায়ণতার জন্য তাঁকে সম্মান করত সমাজ। সর্বোপরি সঙ্ঘসেবায় তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তাঁর প্রয়াণ রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের এক অপূরনীয় ক্ষতি বলেই মনে করছেন দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা তাঁর ভক্তরা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *