পরিবেশ ক্রমশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। জঙ্গল নষ্ট হচ্ছে। দূষণ বাড়ছে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে একাধিক সচেতনতামূলক প্রচার হলেও বাস্তবে তার অভাব লক্ষ্য করা যায়। ক্রমশ সমৃদ্ধ হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ বনানির। রাজ্যের সর্বত্রই যখন এই অবস্থা তখন আশার আলো দেখাচ্ছে আরামবাগের চাঁদুর ফরেস্ট।
প্রায় ২ বছর ধরে রেঞ্জার অফিসার আসরাফুল ইসলাম এই জঙ্গল বাঁচাতে একের পর এক উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বর্ষা এলেই গাছের তলার মাটির ক্ষয় শুরু হয়। মাটির একটা স্তর ধুয়ে চলে যায়। এর ফলে মাটি নষ্ট হয়। অন্যদিকে বর্ষার জলকে ধরে রাখাও যায় না। জঙ্গল বাঁচাতে তাই তিনি অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করলেন।
জঙ্গলের ভিতর বিস্তীর্ণ জায়গা নিয়ে শুরু করেছেন পুকুর খননের কাজ। হঠাৎ জঙ্গলের ভিতর পুকুর কাটছেন কেন? রেঞ্জার অফিসার বলছেন, এখানে পুকুর খননের ফলে একসঙ্গে অনেকগুলি সুফল মিলবে। একদিকে বর্ষায় জঙ্গলের যে মাটি ধুয়ে যায় তা অন্যত্র না গিয়ে পুকুরে গিয়ে জমা হবে। অন্যদিকে, জল সংরক্ষণের একটি স্থায়ী বন্দোবস্ত হবে। প্রখর গ্রীষ্মে ওই জল গাছেদের প্রয়োজনে লাগবে।
সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কয়েক বছর ধরে জঙ্গল সংরক্ষণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে আস্তে আস্তে এই জঙ্গলে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছে। গাছে এখন অজস্র পাখির বসবাস হয়েছে। গ্রীষ্মে এদের আর জলকষ্ট হবে না। পাখিরা এখানে জল খেতে পারবে, স্নানও করতে পারবে।
অন্যদিকে, জঙ্গলের বেশ কিছু বন্যজন্তু আছে। যাদের অনেক সময় জলের খোঁজে গ্রামে যেতে হয়। সেই জন্তুরা পানীয় জলের জন্য এই পুকুর থেকে জল সংগ্রহ করতে পারবে। সবমিলিয়ে আরামবাগ বন দফতরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে পশুপ্রেমী মানুষ। আগামী দিনে এই উদ্যোগ একদিকে যেমন বনজ জীবজন্তুর অনেকটা সহায়তা করবে, তেমনি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতেও এই উদ্যোগ যথেষ্ট কার্যকরী হবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।