সুতা বলতে পারেন অথবা সুতলি! এখানে এলে বুঝবেন নামে কিস্যুটি যায় আসে না। আসল কথা হলো রসাস্বাদন। মুখে দেওয়া মাত্র দেখবেন, সুতলি কাবাব আপনার জিভের স্বাদকোরকের সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে ফেলেছে। আর ততক্ষণে বুঝতে পারবেন, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন স্বর্গীয় স্বাদের জ়াকারিয়ায়।
নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন এই জ়াকারিয়া স্ট্রিট বছরভরই খাদ্যরসিকদের ঠিকানা। হরেক রকমের কাবাব আর নানা রকমের মোগলাই খানার সম্ভারে সেজে থাকে এই চত্বর। তবে রমজান এলে এর চেহারাটাই যেন বদলে যায়। রমজান মাসে এই রাস্তার অলিতে গলিতে ছড়িয়ে থাকে স্বর্গীয় সুবাস। আর সেই সুবাসে খাবারের ঠেকগুলিতে ফি বিকেলে ঢুঁ মারেন খাদ্যরসিকরা। রমজানের জ়াকারিয়া আরও একটা কারণে মাস্ট ফুড ডেস্টিনেশন, সেটা হলো এখানে রমজানের সময়েই পাওয়া যায় স্পেশাল কিছু খাবার।
মঙ্গলবার রমজানের খানা-খাজানায় সেজে ওঠা জ়াকারিয়া স্ট্রিটে এসেছিলেন তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার বড়কর্তা সুপ্রান্তিক সরকার। ফিয়ার্স লেন বা স্থানীয় চুনা গলির এক প্রান্তে ছোট্ট একটা কাবাবের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা কাবাব জাস্ট উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। ভোজন রসিক সুপ্রান্তিকের কথায়, ‘বহু বছর ধরে আসছি এই জ়াকারিয়ায়। কাবাবের বেশ কয়েকটি নামকরা দোকান আছে এই চত্বরে। সেগুলির পাশাপাশি এমন কিছু ছোট দোকানও আছে যা হিডেন জেম। এই দোকানটি ঠিক তেমন। দামও পকেটের মাপে।’
মাছের কিছু ভাজা পদ এবং কাবাব, যা সারা কলকাতায় মিলবে না, জ়াকারিয়া স্ট্রিটের রাস্তার কাউন্টার এই রমজানে তার পসরা নিয়ে বসে থাকে। মাঝামাঝি লম্বা ফালি করে ম্যারিনেট করা মাছের বড় টুকরো তেলে ভাজা হয়ে যে খুশবু ছড়ায়, তার জন্য বিকেল থেকে লাইন পড়ে। আবার মুরগির রেশমি টিক্কা কাবাবকে মাখন আর ক্রিমে স্নান করানোর পর যে পদটি প্লেটে আসে, তার নাম চিকেন আফগানি। গ্রেভি আইটেমের সঙ্গে যাঁরা শিরমল পছন্দ করেন, তাঁদের আসতেই হবে এই জ়াকারিয়ায়। কারণ শহরের সেরা শিরমলের ঠিকানা এখানেই। এ ছাড়া চিকেন চাঙ্গেজ়ি চাখতে চাইলেও জ়াকারিয়া স্ট্রিটে না এসে উপায় নেই।
এই চত্বরের নামকরা কিছু রেস্তরাঁয় সন্ধ্যার পরে যেমন জায়গা পাওয়া দুষ্কর, তেমনই রাস্তার ধারের স্টলেও লাইন দিয়ে খাবার কিনতে হয়। কোভিডের কারণে গত তিন বছর জ়াকারিয়া সে ভাবে সেজে ওঠেনি। তবে এই বছর রমজান মাসে এই চত্বর কিন্তু ফের পুরোনো মেজাজে ব্যাটিং করছে। শুধু খাবার? রাস্তার উপরে পসরা হাজারো শরবতের। বরফের টুকরো সঙ্গে তরমুজের কুচি দেওয়া শরবত যেন একাই একশো। আর শেষ পাতে বত্তিশি হালুয়া তো আছেই। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, জ়াকারিয়া আরবি শব্দ। যার অর্থ সৃষ্টিকর্তার স্মরণে। লোকে বলে সেই জন্যই এখানকার খাবারের স্বাদ এমন স্বর্গীয়।