Migrant Bird : ডেডলাইন ২০৭০, পরিযায়ীদের ৬৮% আসবে না সমতলে: গবেষণা – migrant bird 68 persent in india are on track to disappear


কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়
খারাপ মানে একেবারে ঘোর অমঙ্গলেরই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন দু’জন। ১৯৬২ সালে। সত্যজিৎ রায় ও র‍্যাচেল কারসন। যে আশঙ্কার কথা সেই সময়ে নিজের নিজের সৃষ্টির মাধ্যমে জানিয়েছিলেন ওই দু’জন— এক জন চিত্র পরিচালক ও এক জন লেখিকা— ছ’দশক পর, এখন আর তাকে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবিতে কলকাতা থেকে দার্জিলিং বেড়াতে আসা যুবক, অশোককে পাকড়াও করেছিলেন পক্ষীপ্রেমী জগদীশবাবু। পরিযায়ী পাখিদের এক দেশ থেকে বহু দূরের অন্য দেশে যাত্রার কথা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, “অত টুকু চেহারা, কত টুকুই বা ওদের ব্রেন! তবু প্রতি বছর ঠিক রাস্তা চিনে হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে আসে।”

Alipore Zoo : হরিণের খাঁচায় কাদার চৌবাচ্চা-ভালুককে টক দই, বাবুকে ঘোল
তার পরেই হঠাৎ আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসে প্রৌঢ় পক্ষীবিদের চোখে। জগদীশবাবু বলে ওঠেন, “এখন চারদিকে এত নিউক্লিয়ার টেস্ট…আমি তো মাঝে মাঝে ভাবি, ওরা যদি আর না-আসে? যদি ওদের মাথা খারাপ হয়ে যায়? যদি ওরা উড়ন্ত অবস্থাতেই মরে গিয়ে বৃষ্টির ফোঁটার মতো…।” কথাটা শেষ করতে পারেননি তিনি। মুখে আটকে গিয়েছিল। ছবির পরিচালক সত্যজিৎ রায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কোন অমঙ্গলের আশঙ্কা করছেন তিনি।

এ বার র‍্যাচেল কারসন। আমেরিকার কোন শহর তাঁর কাহিনির প্রেক্ষাপট, সেটা তিনি জানাননি। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ যে বছর মুক্তি পায়, সেই ১৯৬২-তেই প্রকাশিত হয় র‍্যাচেলের ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ বা ‘নীরব বসন্ত’। বইয়ের শুরুটা পড়েই শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গিয়েছিল পরিবেশবিদদের।

Hooghly News : জঙ্গলের মাঝেই হচ্ছে পুকুর খনন, বন্যপ্রাণীদের তৃষ্ণা নিবারণে বিশেষ উদ্যোগ আরামবাগের
র‍্যাচেল লিখেছিলেন, বসন্তের ওই সকালে কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই ঘুম থেকে উঠেছিলেন শহরবাসী। শহরটা অস্বাভাবিক নিস্তব্ধ। কোনও পাখি ডাকেনি সেদিন। অদ্ভুত ভাবে ওই শহর থেকে বিদায় নিয়েছিল সব পাখি!

অতি সম্প্রতি চার ভারতীয় গবেষকের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতের ১০৯১ প্রজাতির পাখির ৬৭-৭৩ শতাংশই তাদের স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে বিদায় নেওয়ার পথে— সৌজন্যে দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তন। অর্পিত দেওমুরারি, অজয় শর্মা, দীপঙ্কর ঘোষ ও রণদীপ সিংয়ের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ পাখিই বদলে যাওয়া পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দেশের সমতল ছেড়ে হিমালয়ের মতো উঁচু পার্বত্য এলাকায় আশ্রয় নেবে।

২০৭০ সালের মধ্যেই পশ্চিম হিমালয়, সিকিম, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং পশ্চিমঘাটের মতো জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এলাকাগুলোর আমূল পরিবর্তন হবে। প্রত্যেক জায়গাতেই জীব মানচিত্র থাকে। ওই এলাকায় বসবাসকারী সব জীবদের নিয়ে ওই মানচিত্র তৈরি। সেই মানচিত্রই বদলে যাবে।

Rare Species Animal: পিঠে তারার মতো নকশাকাটা, ভরা বাজারে এই প্রাণীকে দেখে ছড়াল চাঞ্চল্য
বিশেষ করে, পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে অন্তত ৬৮ শতাংশই আর সমতলের দিকে আসবে না বলে ওই গবেষণা জানিয়েছে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করে যাওয়া সংগঠন প্রকৃতি সংসদের তরফে অপূর্ব চক্রবর্তী বলছেন, “এটা শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বেই ঘটছে। নিয়মিত দেখছি, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসা কমে যাচ্ছে। কোনও কোনও প্রজাতি তো অলক্ষ্যে সরেও যাচ্ছে।”

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পুনর্বসু চৌধুরীর মতে, “জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বাসস্থানের জায়গা কমে যাওয়াও একটা বড় কারণ। যে প্রজাতির পাখিদের বহু বছর ধরে দেখা যেত, তাদের সংখ্যা কমছে। আবার নতুন প্রজাতি আসছে, এমনও হচ্ছে। ওদের বাসভূমির বণ্টন-ব্যবস্থাটাই বদলে যাচ্ছে।”

Sikkim Tourism : শোনা যাবে হাজারো পাখির গান! সিকিমে নয়া ডেস্টিনেশন কিতাম উৎসব
ইতিমধ্যেই শীতে দক্ষিণবঙ্গে নর্দার্ন পিনটেল, কটন পিগমি গুজ, নর্দার্ন শোভেলারের মতো পরিযায়ী পাখির সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছে। আবার পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী হিল ময়নার দেখা পাওয়া গিয়েছে বালিগঞ্জের মতো জায়গাতেও! পরিচিত বিন্যাসের এমন বদলই চিন্তায় ফেলছে পরিবেশবিদদের।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *