জ্যোতির্ময় কর্মকার : সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেলেন শুভেন্দু অধিকারী। শীর্ষ আদালতেও খারিজ হয়ে গেল শুভেন্দু অধিকারীর পঞ্চায়েত মামলা। কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে এসেছিলেন শুভেন্দু। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মামলায় হস্তক্ষেপ করতে চাইল না সুপ্রিম কোর্ট।
কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার পাশাপাশি বর্তমান ভোটার তালিকা এবং জাতিগত সমীক্ষার ভিত্তিতে আসন সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারির দাবি ছিল, যেভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ওবিসি সার্ভে করা হয়েছে, ঠিক সেই ভাবেই প্রত্যেকটা কেন্দ্রের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তফশিলি জাতি-উপজাতিরও সার্ভে করতে হবে। সেই জাতি সমীক্ষার ভিত্তিতেই আসন সংরক্ষণের স্ট্যাটাস ঠিক হওয়া উচিত। তারপরই নির্বাচন হওয়া উচিত।
এদিন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়ে দেন, ‘কীভাবে আমরা নির্বাচন আটকাতে পারি!’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নির্বাচন স্থগিত করা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। আমরা এটা করতে পারি না। এক্ষেত্রে আমরা হস্তক্ষেপ করব না।’ প্রসঙ্গত, রাজ্যের বেশিরভাগই পঞ্চায়েতের মেয়াদই শেষের মুখে। ভোট কবে? সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আর পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণায় কোনও বাধা রইল না। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
উল্লেখ্য়, পঞ্চায়েত ভোটের রোস্টারে ‘বেনিয়ম’-এর অভিযোগ তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জবাব ‘সন্তোষজনক নয়’ দাবি করে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন তিনি। আদালতে তিনি আর্জি জানান,’মামলাটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি বা দিনক্ষণ ঘোষণা না করা হয়’। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে তখনও পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল ছিল।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর পঞ্চায়েত ভোটে ‘রিজার্ভেশন রোস্টার’ প্রকাশ করে কমিশন। সঙ্গে এসসি, এসটি ও মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের খসড়া তালিকাও। শুভেন্দুর অধিকারীর অভিযোগ, ‘তৃণমূলের ব্লক নেতারা, যাঁরা ১০০ দিনের কাজের টাকা চুরি করেছে, সীমাহীন কাটমানি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেটের সৃষ্টিকর্তা যাঁরা, তাঁদের সঙ্গে বসে বিডিওরা এই কাজ করেছেন।’ এই মর্মে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন জবাবও দেয়। কিন্তু বিরোধী দলনেতা দাবি করেন, ‘কমিশন যে জবাব দিয়েছে, তা সন্তোষজনক নয়’।
এরপরই মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। চলতি বছর ৩০ মার্চ হাইকোর্ট শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে রায় দেয়। রায় ঘোষণা করে আদালত বলে, ভোট-প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয় হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, নির্বাচন কমিশন-ই এই বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে। ফলে পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে আর কোনও আইনি বাধা থাকে না। কিন্তু তারপরই বিরোধী দলনেতা পালটা হুঁশিয়ারি দেন, ‘আগামী ৭ দিন যেন ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা না হয়।’ রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলা-ই এদিন খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন, Moloy Ghatak, Coal smuggling case: কয়লা পাচারকাণ্ডে আপাত স্বস্তি, সাময়িক রক্ষাকবচ মলয় ঘটকের