নাম ট্রান্সফারে কী আসে যায়? গাড়ি বিক্রির পরে নিয়ম কানুন মেনে মালিকের নাম পরিবর্তন না হলে অনেক কিছুই এসে যায়। এমনকী, অন্যের অপরাধের দায় আপনার ঘাড়ে চেপে যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত পুলিশ প্রশাসন। শক্তিগড়ে কয়লা মাফিয়া রাজেশ ঝা হত্যাকাণ্ডে হরিয়ানা থেকে চুরি হওয়া একটি নীল ব্যালেনো গাড়িতে কলকাতায় বিক্রির জন্য রাখা অন্য একটি নীল ব্যালেনোর নম্বরপ্লেট পাওয়ার পরে উদ্বিগ্ন পরিবহণ দপ্তরও।
তদন্তে দেখা যাচ্ছে, কলকাতার যে গাড়ির নম্বরপ্লেটটি অপরাধে যুক্ত গাড়িতে লাগানো হয়েছিল, সেই গাড়িটি একটি সংস্থার কাছে বিক্রির জন্য জমা করা হলেও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না-হওয়ায় মালিকানার পরিবর্তন হয়নি। এই পরিস্থিতিতে গাড়ির বিক্রির সময়ে নাম পরিবর্তন প্রক্রিয়া সরলীকরণ করার প্রস্তাব বিবেচনা করছে পরিবহণ দপ্তর।
পাশাপাশি ডিলারের কাছে গাড়ি বিক্রি করে বা এক্সচেঞ্জ অফারে নতুন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে পুরোনো মালিকানার পরিবর্তন নিয়ে হয়রানি কমাতে নয়া লাইসেন্সিং নীতির নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। বিভিন্ন এজেন্সিকে পুরোনো গাড়ি কেনাবেচা নিয়ে একই ধরনের লাইসেন্সিং ব্যবস্থার আওতায় আনার প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
আসলে মালিকানার পরিবর্তনে আইনি জটিলতাই ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অনীহা তৈরি করছে যা পরবর্তীতে সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই প্রক্রিয়া বেশ কিছুটা সময় সাপেক্ষ। আইনে বলা রয়েছে, পুরোনো গাড়ির মালিকানা সরকারি খাতায় পরিবর্তনের সময়ে সংশ্লিষ্ট আরটিও অফিসে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে সশরীরে হাজির হতে হয়। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য বহু বিক্রেতা আরটিও অফিসে নির্ধারিত দিনে হাজির হন না। গাড়ি বিক্রির টাকা নিয়েই দায়িত্ব চুকিয়ে দেন তিনি। ক্রেতারও গড়িমসি থাকে। ফলে দেখা যায়, গাড়ি বিক্রির পরে দু’হাত ঘুরে গেলেও সরকারি খাতায় প্রথম মালিকের নামই রয়ে গিয়েছে।
পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী স্বীকার করে নিয়েছেন নাম পরিবর্তনের এই জটিলতার কথা। তিনি বলেন, ‘পুলিশের পরামর্শ মেনে গাড়ি বিক্রির সময়ে নাম পরিবর্তনের নিয়মটি সরলীকরণ করা হচ্ছে। পুরোনো গাড়ির মালিকের নাম সরকারি খাতায় বদল করার জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতা ভার্চুয়ালি যাতে হাজিরা দিতে পারেন, সেজন্য আইনি ব্যবস্থা হচ্ছে, যাতে বিক্রির পরেই ক্রেতা-বিক্রেতা নাম পরিবর্তন করে নিতে পারেন।’
পরিবহণ দপ্তর গত ২৯ মার্চ একটি সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে, নতুন গাড়ির ডিলারের থেকে কেউ এক্সচেঞ্জ অফারে গাড়ি কেনার সময়ে পুরোনো গাড়ির নাম পরিবর্তন নিয়ে সরকারি দপ্তরে ঘুরতে হবে না। ডিলার ক্রেতার থেকে পুরোনো গাড়ির নথি ও অনুমতি নিয়ে গাড়িটি নিজের কাছে রাখতে পারবে। প্রতি সপ্তাহে এমন গাড়ির বিস্তারিত তথ্য পরিবহণ দপ্তরে জানাতে হবে, যাতে তা ‘বাহন’ পোর্টালে অর্ন্তভুক্ত করা যায়। এই গাড়ি সরকারি খাতায় নথিভুক্ত না-হওয়া পর্যন্ত ডিলার কোনওভাবেই বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধুমাত্র মেরামতি বা ট্রায়ালে ব্যবহার করা যাবে।
সম্প্রতি শক্তিগড়ে কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত নীল গাড়ির মালিকানা খুঁজতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে এর মালিক হরিয়ানার বাসিন্দা। দিল্লিতে গাড়িটি চুরি গিয়েছিল। তারপর গাড়ির নম্বরপ্লেট বদল করে অপরাধমূলক কাজে তা ব্যবহৃত হয়। প্রায় ২২ বছর আগে কলকাতায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে জঙ্গিহানার ঘটনায় ব্যবহৃত বাইকের মালিকানা খুঁজতে গিয়েও পুলিশ দেখেছিল, সেই গাড়ির তিনবার হাতবদল হয়েছে।
তবু বাইকটি পরিবহণ দপ্তরের খাতায় প্রথম মালিকের নামেই রয়ে গিয়েছে। পরিবহণ দপ্তরের অধিকর্তা দিব্যেন্দু দাসের কথায়, ‘বহু সময়ে বেচে দেওয়া গাড়ি ভিন্ রাজ্যে অপরাধে জড়িয়ে পড়লে পুলিশি হয়রানির শিকার হয়ে গাড়ির পুরোনো মালিক এসে কান্নাকাটি করে। পরিবহণ দপ্তরের কিছুই করার থাকে না। তাই গাড়ির মালিককেই সচেতন হতে হবে।’