এর আগের শুনানিতে এই মামলায় ইন্টারভেনর মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর তরফে আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী, মেহবুব আহমেদরা আরটিআই আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাপ্ত এবং এনসিআরবি রিপোর্টের তথ্য পেশ করে দেখিয়েছিলেন, মালদা সংশোধনাগারে সাড়ে তিনশো বন্দির ধারণক্ষমতায় এগরাশোর বেশি বন্দি রয়েছেন।
রাজ্যের বেশির ভাগ সংশোধনাগারেই ছবিটা প্রায় একই রকম দুর্বিষহ। বিশেষ করে জেলা, মহকুমা সংশোধনাগারে বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতা সাপেক্ষে ১৭৫ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ ১০০ ধারণক্ষমতায় ১৭৫-১৮৫ জন বন্দি থাকছেন সংশোধনাগারে। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে স্রেফ বিচারাধীন অবস্থায় হাজারের বেশি মানুষের বন্দি থাকা, ১৯৯টি শিশুকে নিয়ে ১৬৫ জন মহিলার বন্দি থাকার তথ্যও পেশ করা হয়েছিল।
এই রাজ্যেই আবার বন্দি বিদেশি নাগরিকের সংখ্যাও সর্বাধিক। ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি-র গাইডলাইন মেনে বিচারাধীন বন্দিদের মুক্তি ত্বরান্বিত করার কাজেও যে বিস্তর গাফিলতি রয়েছে, সে অভিযোগও করা হয়।
অন্য দিকে রাজ্যের ৬০টি সংশোধনাগারের জন্যে অনুমোদিত রেগুলার মেডিক্যাল অফিসারের পদই মাত্র ২৯, তার মধ্যেও ২৬টি পদে দীর্ঘদিন কোনও ডাক্তারই নেই বলেও তথ্য তুলে ধরা হয়। চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগহীন অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে জেলখানায় বন্দিমৃত্যুও উত্তরোত্তর বাড়ছে বলে আগের শুনানিতে জানানো হয়েছিল। ২০২০-তে বন্দিমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪৮, ‘২১-এ তা বেড়ে হয় ১৯৪, আর ২০২২-এর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ অবধি মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১২৯।
এই প্রেক্ষিতেই রাজ্যের কোন সংশোধনাগারে কত ধারণক্ষমতা, সেই সাপেক্ষে সংশোধনাগার-পিছু এই মুহূর্তে ঠিক কত বন্দি রয়েছেন, তাঁদের কত জন বিচারাধীন, বিচারাধীনদের কতজন স্রেফ বেল বন্ডের টাকার ব্যবস্থা না-করতে পারায় বন্দি, সাজাপ্রাপ্তদের কে কত বছর ধরে বন্দি, নিম্ন আদালতে মৃত্যদণ্ডের আদেশ হলেও হাইকোর্ট বা সু্প্রিম কোর্টে তা বহালের নির্দেশ ছাড়াই কাউকে আইনবিরুদ্ধ ভাবে সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়েছে কিনা,
বিদেশি বন্দি, মহিলা বন্দি কত জন, মাদক-মামলায় বন্দি কত-এই সব তথ্য বিশদে পেশ করার জন্যে সোমবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গেই ডাক্তার-মনোবিদ, কারাকর্মীদের অনুমোদিত পদ এবং শূন্যপদের পরিস্থিতি, নিয়োগ-পরিকল্পনা নিয়েও রিপোর্ট চেয়েছে হাইকোর্ট।