ছোট পুরসভার জন্যও এ বার ‘চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল পদ’ তৈরি হবে। রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন পর্যন্ত ‘ডি’ এবং ‘ই’ শ্রেণিভুক্ত পুরসভাগুলিতে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছিল। তাঁরাই পুরসভা পরিচালনা করতেন। তবে এ বার থেকে মোট তিনজন সদস্যকে চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এর ফলে পুরসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানরা একক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের বৈঠকে সেটাকে পাশ করাতে হবে।
এতে পুরসভার কাজে স্বচ্ছতা আসবে বলেই মনে করছেন সরকারি কর্তারা। বড় পুরসভার ক্ষেত্রেও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, পুরসভার কাজে স্বচ্ছতা আনা এবং আরও বেশি সংখ্যক কাউন্সিলরকে সরকারি পদ পাইয়ে দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলে একাধিক সদস্য থাকায় চেয়ারম্যানরা খেয়ালখুশি মতো কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। একই সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের জায়গাও দেওয়া যাবে।
পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা বাড়াতে সম্প্রতি পুর আইন সংশোধন করা হয়েছে। সম্প্রতি তাতে রাজ্যপালের সিলমোহর পড়েছে। তারপরই নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। তাই পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সংখ্যা বাড়াতে আর কোনও বাধা নেই।
জনসংখ্যার বিচারে রাজ্যের পুরসভাগুলিকে যথাক্রমে এ, বি, সি, ডি, ই-এই পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যে সব পুরসভার মোট জনসংখ্যা ২ লক্ষ ১৫ হাজারের উপর এবং ওয়ার্ড সংখ্যা ৩১-৩৫ এর মধ্যে, সেগুলি এ শ্রেণির। এর মধ্যে রয়েছে বারাসত, বরাহনগর, বর্ধমান, ভাটপাড়া, দার্জিলিং, কামারহাটি, খড়্গপুর, মহেশতলা, নৈহাটি, উত্তর দমদম, পানিহাটি, রাজপুর-সোনারপুর, দক্ষিণ দমদম এবং উলুবেড়িয়া।
জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৭০ হাজার থেকে ২ লক্ষ ১৫ হাজারের মধ্যে হলে এবং ওয়ার্ডের সংখ্যা ২৬-৩০ এর মধ্যে থাকলে তারা বি শ্রেণির মধ্যে পড়বে। এর মধ্যে রয়েছে বহরমপুর, ইংলিশবাজার, হলদিয়া, চুঁচুড়া, মধ্যমগ্রাম, রায়গঞ্জ এবং শ্রীরামপুর পুরসভা। জনসংখ্যা ৮৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজারের মধ্যে থাকলে এবং ওয়ার্ড সংখ্যা ২১ থেকে ২৫ এর মধ্যে হলে সেগুলিকে সি শ্রেণির পুরসভা হিসেবে ধরা হয়।
অশোকনগর, বালুরঘাট, বৈদ্যবাটি, বাঁকুড়া, বাঁশবেড়িয়া-সহ রাজ্যে এ রকম ৩৪টি পুরসভা রয়েছে। আর যাদের জনসংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে ৮৫ হাজারের মধ্যে হয় এবং ওয়ার্ড সংখ্যা ১৬-২০-এর মধ্যে, তাদের ডি শ্রেণির মধ্যে ফেলা হয়। ই শ্রেণিভুক্ত পুরসভাগুলি সবথেকে ছোট। তাদের জনসংখ্যা ৩৫ হাজারের মধ্যে থাকে। ওয়ার্ড সংখ্যা ৯-১৫টির মধ্যে থাকে।
নয়া বিধি অনুযায়ী, এ শ্রেণিভুক্ত পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে বাড়িয়ে ৭ করা হয়েছে। বি শ্রেণির ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ৪ থেকে বেড়ে ৬ হয়েছে। সি শ্রেণির ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৩ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ জন। ডি এবং ই শ্রেণির পুরসভায় চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের অস্তিত্বই ছিল না। সে জায়গায় চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলে সর্বোচ্চ তিনজন সদস্য নেওয়া যাবে।
যেমন নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা। ডি শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় নিউ ব্যারাকপুর পুরসভায় এত দিন কোনও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল ছিল না। পরিবর্তে কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে ঠিক করা ৭ জনের স্ট্যান্ডিং কমিটি ছিল। তবে এখন থেকে সেখানেও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল গঠিত হবে।