অতএব, মোকাবিলাই একমাত্র পথ। আর তা বুঝেই মঙ্গলবার একটি নির্দেশিকা (হিট অ্যাডভাইজ়রি) প্রকাশ করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। নির্দেশিকা দিয়েছে কলকাতা পুরসভাও। দু’টিতেই রোদে যথাসম্ভব কম বেরনো এবং তৃষ্ণার অপেক্ষা না-করে জল খেয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাপের প্রভাবে কেউ অসুস্থ হলে, পাশে থাকা সাধারণ মানুষের কী করণীয়, সে কথাও বলা হয়েছে অ্যাডভাইজ়রিতে। গরমে অসুস্থ রোগীদের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে হাসপাতালগুলিকেও।
কী ভাবে জ্বলছে বাংলা?
হাতেগোনা কয়েকটি জায়গা বাদ দিলে মঙ্গলবার রাজ্যের বাকি প্রায় সর্বত্র সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির ঘর ছাড়িয়েছে। উষ্ণতম বর্ধমান (৪০ ডিগ্রি), ঘাড়ের কাছে সল্টলেক (৩৯.৯), বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর (৩৯.৮), শ্রীনিকেতন (৩৯.৪) এবং দমদম (৩৯.২)। কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মরসুমে প্রথম বারের জন্য ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর পেরিয়ে ৩৮.৬ ডিগ্রিতে।
গত কয়েক দিন ধরেই ভয়াবহ গরমে জ্বলছে বাংলা। অসুস্থ হচ্ছেন বহু মানুষ। বিশেষ করে গরমে স্কুলফেরত শিশুদের অনেকেই অসুস্থ হচ্ছে। তারকেশ্বর ও চাকলায় চার পুণ্যার্থীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে মারাত্মক গরমের ছোবলে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, অন্তত চলতি সপ্তাহে এই পরিস্থিতি সম্ভবত পাল্টাবে না। এর অবশ্য পূর্বাভাস ছিল।
ফেব্রুয়ারিতেই মৌসম ভবন জানিয়ে দিয়েছিল এপ্রিল এবং মে-তে ঘনঘন তাপপ্রবাহে নাজেহাল হবে দেশ। বাস্তবে হলোও তা-ই। তবে বাংলার কপালে যে এমন দুর্ভোগ লেখা থাকবে, এমন শুকনো গরম দাপিয়ে বেড়াবে, তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারেনি বঙ্গবাসী। দেশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে দেখা নেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার। ফলে উত্তর-পশ্চিমের গনগনে হাওয়া উত্তর ভারত ঝলসে অবাধে ঢুকছে বাংলায়। আর এই কারণেই তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বাড়ছে প্রতি মুহূর্তে।
কেন বাংলায় এই এপ্রিল এত ভয়ঙ্কর? আবহবিদদের ব্যাখ্যা, একটি নির্দিষ্ট এলাকায় গরম হাওয়া ক্রমাগত পাক খেতে থাকলে, বাতাসের উপরের স্তরে জলীয় বাষ্পের অভাব হলে এবং মেঘহীন আকাশ থাকলে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এ বার বাংলায় এই তিনটি পরিস্থিতিই রয়েছে। বিশেষ করে এপ্রিলে একবারও কালবৈশাখী না-হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। আর ভৌগোলিক কারণে এমনিতেই বাংলার পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ ভাগে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বেশি থাকে।
মৌসম ভবনের এই ব্যাখ্যা আর পূর্বাভাস সামনে রেখেই মঙ্গলবার সব হাসপাতালকে গরমে অসুস্থদের চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিল স্বাস্থ্যভবন। বলা হয়েছে, ইমার্জেন্সি অবজ়ার্ভেশন ওয়ার্ড এবং ইন্ডোরে কয়েকটি করে বেড এ জন্য বরাদ্দ রাখতে। মজুত রাখতে হবে স্যালাইন-সহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। সেইসঙ্গে আমজনতাকে পইপই করে বলা হয়েছে, বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত বাইরে থাকা যথাসম্ভব এড়াতেই হবে। নিতান্ত বেরোতে হলে আধ ঘণ্টা অন্তর কিছুক্ষণের জন্য যেতে হবে ছায়ায়। বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে শিশু, বয়স্ক এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের।
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার উপ-মহাধ্যক্ষ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলায় তাপপ্রবাহ যাকে বলে, তা দেখা দেয়নি। তবে পরিস্থিতি প্রায় সে রকমই।’ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই গরমে হয় শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে বা শরীর জলশূন্য (ডিহাইড্রেশন) হয়ে বিপদ ডেকে আনে। তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পর্যাপ্ত জল খেতে বলছেন চিকিৎসকেরা। চা-কফি-নরম পানীয়ের উপরে রাশ টানাও জরুরি। ক্যাফেইন, অতিরিক্ত চিনি বা সোডিয়াম বাই-কার্বনেট জলশূন্যতার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করে। তাই ভরসা থাকুক ফলের রস, দই, ঘোল, ছাতুর শরবতের মতো পানীয়ের উপরে।