আজ চৈত্র মাসের সংক্রান্তি। রাত পোহালেই নববর্ষ অর্থাৎ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নতুন বছর শুরু হচ্ছে। চৈত্র মাসের শেষ দিনটিকে পালন করার ক্ষেত্রে বাঙালিদের বংশ পরম্পরায় ভিন্ন-ভিন্ন রীতি-রেওয়াজ রয়েছে। তারই একটি প্রাচীন রেওয়াজ শুক্রবার দেখা গেল জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়িতে।
জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির কুলো পুরোহিতের তত্ত্বাবধানে ঘোষাল পরিবারের সদস্যরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। তাঁদের বংশ পরম্পরায় চলে আসা রীতি-নীতি মেনে ছাই উড়িয়ে অশুভশক্তিকে দমন এবং ছাতু উড়িয়ে শুভশক্তিকে আমন্ত্রন জানাতে দেখা যায়। প্রতি বছরই উদযাপিত হয় এই প্রাচীন রীতি।
এদিন জলপাইগুড়িতে বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি সিংহ দুয়ারের সামনে তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ঘোষাল পরিবারের পাঁচ জন বংশধর তাঁদের পুরান রীতি মেনে এই ভাবেই চৈত্র সংক্রান্তি পালন করলেন। দুই পায়ের মাঝ দিয়ে ছাই এবং ছাতু উড়িয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা। রাজ পুরোহিতদের বংশধর পার্থপ্রতিম ঘোষাল জানালেন, বংশ-পরম্পরায় কয়েক যুগ ধরে তারা এই নিয়ম পালন করে আসছেন।
পাশাপাশি, বাংলা নতুন বছরের আগের দিন প্রত্যেকে ২০ রকম তেতো ও ২০ রকম বিভিন্ন শাক খেয়ে থাকেন। মন্দির বেষ্টিত রাজবাড়ি এই বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি। মূলত বৈকুন্ঠনাথ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ পূজিত হয় বলেই এই রাজবাড়ির নাম বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি। জন্মাষ্টমীর দিন বৈকুণ্ঠনাথের পুজো হয়।
বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়িতে প্রতীকি হিসেবে নিশুতি রাতে সন্ধিপুজোয় হাড়িকাঠে বলি দেওয়া হয় মাটি-ধান দিয়ে তৈরি নরমুণ্ড। শতাব্দী প্রাচীন কিছু ঐতিহ্য, আচার আজও সম মর্যাদায় পালিত হয় রাজবাড়িতে।জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজ্যের অধীনে ছিল। রাজবাড়ির শেষ রাজা ছিলেন প্রসন্নদেব রায়কত।
তবে বর্তমানে রাজবাড়ির ভিতরে জন সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। একমাত্র দুর্গাপুজোর সময় রাজবাড়ির ভিতর থেকে রাজার মুকুট, অস্ত্র সহ কিছু জিনিস বাইরে বের করে অন্যায় হয় প্রদর্শনের জন্য। জলপাইগুড়ির রাজা ধর্মীয় রীতি মেনে বাড়ির পাশে দীঘি তৈরি করেন, যেটি আজও বর্তমান।