উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া এদিন ক্যাম্পাসে ছিলেন না। তবে রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার সারাক্ষণ তাঁর সঙ্গ দিয়েছেন। রাতে রাজভবনের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ক্যাম্পাসে উপাচার্যকে না পাওয়া নিয়ে পড়ুয়ারা আচার্যর কাছে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
পড়ুয়ারা আচার্যকে কাছে পেয়ে জানান, হিন্দু হস্টেলে মেস ব্যবস্থা চালু নেই। দু’বেলা খাবার নিয়ে বেজায় সমস্যা পড়তে হয়। এমনকী চড়া দাম দিয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনে আনতে হয়। রাজ্যপাল তখন জানান, তিনি রাজভবনে ডেকে ছাত্রছাত্রীদের মাসে একবার করে খাওয়াবেন। কাল শনিবার পয়লা বৈশাখে তাঁদের রাজভবনে খেতে যাওয়ার নিমন্ত্রণও করেছেন।
কিন্তু পড়ুয়ারা তাঁকে জানান, এটা কোনও পাকাপাকি সমাধান হতেই পারে না। এটা নিত্য সমস্যা। প্রতীকি সমাধানে আমরা রাজি নই। একদিন খেয়ে মানুষের পেট ভরে না। ফলে তাঁদের কোনও লাভ হবে না। স্থায়ীভাবে মেস চালুর ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ নিতে হবে। তখন আচার্য প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব না দিয়ে প্রসঙ্গান্তরে চলে যান। হিন্দু হস্টেলের আবাসিক শেখ সাহিদুল বলেন, ‘আমরা হস্টেলে পড়ুয়াদের খাওয়া দাওয়া সহ ক্যাম্পাসের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছি।’
কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পর এদিন সকালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন রাজ্যপাল। কলকাতার মতোই আচমকা এই পরিদর্শন। রাজ্যপাল প্রেসিডেন্সিতে গেলে এসএফআইয়ের তরফে জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল এবং অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ইন্ডিপেন্ডেন্টস কনসলিডেশনও (আইসি) জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দেয়।
পড়ুয়া, শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীদের সঙ্গে এদিন বৈঠক করেন রাজ্যপাল। রাতে রাজভবন থেকে প্রেস বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, আচার্য এদিন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। যদিও এদিন এক ছাত্রী আচার্যর সঙ্গে কথাবার্তায় জাতীয় শিক্ষানীতি চালুর আগে সব পক্ষর সঙ্গে আলোচনার কথা জানান। আচার্য তখন তাঁকে জানান, এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। তাই কথা হতেই পারে।
রাজ্যপাল এদিন দুপুর ১২টা ১০ থেকে ২.২০ পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। প্রথমে প্রেসিডেন্সির মূল ভবনে কিছুক্ষণ কাটিয়ে বেকার বিল্ডিংয়ে যান। রাজ্যপাল যখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেকার বিল্ডিংয়ে প্রশান্তচন্দ্র মহালনবীশ হলে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সেই সময় বাইরে এসএফআই সমর্থক পড়ুয়ারা জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। রাজ্যপাল বেরোলেই এক ছাত্র কালো পতাকা দেখাবেন বলে জানান। যদিও পুলিশ সেই কালো পতাকা বাজেয়াপ্ত করে।
শিক্ষকদের মধ্য থেকে বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের গবেষণায় আর্থিক প্রয়োজনের কথা রাজ্যপালকে বলা হয়। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও আশ্বাস দেন। সমাজতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষক আচার্যকে জানান, যে অনেক ভালো ছাত্রছাত্রীই এখন প্রেসিডেন্সিতে স্নাতক পড়ার পর রাজ্যের বাইরে অথবা বিদেশে পড়াশোনা করতে চলে যাচ্ছে। রাজ্যে বর্তমান শিক্ষা পরিস্থিতিই এর কারণ। এই পরিস্থিতিতে আর থাকবে না বলেই আচার্য তাঁদের আশ্বাস দেন। রাজভবনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, স্নাতকোত্তরের পড়ুয়াদের দেশ-বিদেশে কনফারেন্সে যোগদানের জন্য রাজ্যপাল ২ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকাঠামোয় খামতি, শিক্ষকদের প্রচুর শূন্যপদ পূরণ, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের সুযোগ-সুবিধা এবং মেডিকেল ইউনিট চালুর বিষয়েও সরব হয়েছে। রাজভবনের তরফে বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্সির স্নাতকের এক ছাত্রী দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এখন বি আর সিং হাসপাতালে ভর্তি। রাজ্যপাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে তাঁকে দেখতে গিয়ে চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন।