কিন্তু শুভেন্দুর মতো তাঁর পিঠও চাপড়ে দেননি শাহ। আর দিলীপ ঘোষ তো সভাস্থলেই হাজির ছিলেন না। ফলে ‘মুখ’ হওয়ার দৌড়ে তিনি এমনিতেই পিছিয়ে ছিলেন। অমিত শাহ এদিন তাঁর বক্তৃতা শুরু কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভেন্দুকে ‘আমাদের নেতা’ বলে সম্বোধন করেন। তারপরই বিধানসভার বিরোধী দলনেতার রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে স্বীকৃতি দিয়ে শাহ বলেন, ‘দিদির দাদাগিরির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন শুভেন্দু অধিকারী।
দিদির দলের দুর্নীতিকে জনসমক্ষে আনার কাজ করছেন।’ মঞ্চে তখন শুভেন্দু ছাড়াও হাজির ছিলেন সুকান্ত মজুমদার এবং দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার এবং নিশীথ প্রামাণিক। কিন্তু তাঁদের কারও সম্পর্ক এরকম প্রশংসাসূচক বাক্য বলতে শোনা যায়নি শাহকে। তবে শুভেন্দু সম্পর্কে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়েই এক জায়গায় তিনি বলেন, ‘বিজেপি এখানে যে লড়াই করছে, তার জন্যই বীরভূমের এক গোরুপাচারকারীকে জেলে যেতে হয়েছে।
‘ বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে সুকান্ত-ঘনিষ্ঠদের দাবি, এই বাক্যটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে রাজ্য সভাপতিকে দেওয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সার্টিফিকেট। কারণ, সুকান্ত মজুমদার দলের রাজ্য সভাপতি। ফলে বিজেপির লড়াই মানে তাঁর লড়াই। কিন্তু বিজেপিতে শুভেন্দু অনুগামীরা বিষয়টিকে সুকান্তর ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ হিসেবেই দেখছে। তাদের যুক্তি, অমিত শাহ যা বলার বলে দিয়েছেন।
এরপর আর রাজ্য বিজেপির ‘মুখ’ কে, তা নিয়ে কোনও সংশয় থাকতে পারে না। শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এ রাজ্যের এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘অমিত শাহরা জানেন, শুভেন্দুই তৃণমূল বিরোধী লড়াইয়ের জঙ্গি মুখ। দলের অন্য কোনও রাজ্য নেতাকে সামনে রেখে বাংলা থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করা যাবে না।
তৃণমূলও কিন্তু দিলীপ ঘোষ অথবা সুকান্ত মজুমদারকে নয়, নিশানা করছে শুভেন্দুকেই।’ ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু নন্দীগ্রাম থেকে জিতে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের। দলের অন্দরে সুকান্ত শিবিরের অভিযোগ, নিজের পরিষদীয় দল নিয়ে শুভেন্দু বিজেপির মধ্যেই আর একটি বিজেপি তৈরি করেছেন।
সমান্তরাল সংগঠন চালাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে, শুভেন্দু শিবিরের দাবি, দলের সাংগঠনিক নেতারা শুভেন্দুকে অন্ধকারে রেখেই সংগঠন চালাতে চাইছেন। এদিন, দু’পক্ষের উপস্থিতিতে অমিত শাহ সিউড়ির সভা থেকে বিরোধী দলনেতার পক্ষেই ভোট দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী জেলে যাওয়ার ভয়ে বিজেপি করেন। এটা বিজেপির আদি নেতারা ভালোভাবেই জানেন। অমিত শাহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইলে আগে শুভেন্দুকে দল থেকে তাড়িয়ে দেখান।’