পারফরম্যান্সের উন্নতির নিরিখে ভারতে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির মধ্যে প্রথম পাঁচের অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের একাদশতম ‘অ্যানুয়াল ইন্টিগ্রেটেড রেটিং অ্যান্ড র্যাঙ্কিং: পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন ইউটিলিটিজ়’ শীর্ষক রিপোর্টে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এই নজিরকে তুলে ধরা হয়েছে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশ সরকারের মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পারফরম্যান্সের সবথেকে বেশি উন্নতি হয়েছে। দশম রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার স্কোর ছিল ১০০-র মধ্যে ১৯.৪। সেখানে একাদশতম রিপোর্টে বণ্টন সংস্থার স্কোর প্রায় আড়াইগুণ বেড়ে হয়েছে ৪৮.৫।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বণ্টন সংস্থার ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিক্রি করে গড় আয় ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ সরবরাহের খরচের তুলনায় ২২ পয়সা বেশি হয়েছে। যেখানে ২০২০-২১ সালে ইউনিট প্রতি গড় আয় বিদ্যুৎ সরবরাহের গড় খরচের তুলনায় ৯২ পয়সা কম ছিল। পাশাপাশি, উল্লেখজনক কমেছে গড় কারিগরী ও বাণিজ্যিক ক্ষতি।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থার ২০২০-২১ অর্থবছরে গড় কারিগরী ও বাণিজ্যিক ক্ষতি ছিল ২১.৩%। তা ২০২১-২২ সালে কমে হয়েছে ১৬.৭%। এর কারণ হিসাবে কেন্দ্রের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিলিং দক্ষতা ২০২০-২১ সালে ছিল ৭৯%, যা ২০২১-২২ সালে দাঁড়িয়েছে ৮৪.৮%।’
কেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী, ভারতের সরকারি ও বেসরকারি ৫৭টি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির মধ্যে ২৮ নম্বরে রয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সিইএসই রয়েছে ১৬ নম্বরে। ভারতের বিদ্যুৎ বণ্টন ক্ষেত্রের সবথেকে বড় সমস্যা আর্থিক দায়ভার। বহু বণ্টন সংস্থারই এক ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে যা খরচ হয়, আয় হয় তার থেকে কম।
সেখানে ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। বিশেষজ্ঞমহলের মতে, এর সবথেকে বড় কারণ গড় কারিগরী ও বাণিজ্যিক খাতে ক্ষতি বণ্টন সংস্থা অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে সংস্থা যে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে তার ফলে এক বছরে কারিগরী ও বাণিজ্যিক ক্ষতি প্রায় ৫% কমে গিয়েছে।
মাত্র এক বছরের মধ্যে এতটা ক্ষতি কমিয়ে আনাটা রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বড় সাফল্য বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহলের একাংশ। বণ্টন সংস্থা যে সমস্ত পদক্ষেপ করেছে তার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধে ইনসুলেটেড ও এবি কেব্ল ব্যবহার, বড় সাব-স্টেশন ভেঙে ছোট সাব-স্টেশন তৈরি করা, বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া উদ্ধারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদি। সংস্থা সূত্রে খবর, এবি কেব্ল ব্যবহারে ক্ষতি সবথেকে কমার কারণে আরও বেশি এলাকায় এবি কেব্ল টানার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কেন্দ্রের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের প্রথম দশটি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মধ্যে চারটি গুজরাট সরকারের মালিকানাধীন সংস্থা। ওই চার সংস্থা- ইউজিভিসিএল, এমজিভিসিএল, পিজিভিসিএল এবং ডিজিভিসিএল তালিকায় যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। হরিয়ানা সরকারের মালিকানাধীন দুটি বণ্টন সংস্থা রয়েছে নয় ও দশ নম্বরে। কেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী, ভারতের এক নম্বর বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা মহারাষ্ট্রের আদানি ইলেকট্রিসিটি মুম্বই লিমিটেড।