সোমা মাইতি: গ্রেফতার ছেলে জীবনকৃষ্ণ, জল মায়ের চোখে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ছেলে গ্রেফতার হতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন জীবনকৃষ্ণ সাহার মা বেলারানি সাহা। মায়ের দাবি, তাঁকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন ছেলে জীবনকৃষ্ণ সাহা। আর সেই টাকাতেই মাসে মাসে ওষুধ কেনা থেকে যাবতীয় খরচ করতেন তিনি। ছেলে একমাস আগেও দেখা করেন পুরী যাওয়ার আগে। কোনও কোনও সময় ছেলে তাঁর বন্ধুর হাত দিয়েও টাকা পাঠাতেন।
বেলারানি সাহার দাবি, জীবনকৃষ্ণের যখন ৭ বছর বয়স, তখন তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিন মাস ও চার বছরের দুই মেয়েকে বাড়িতে রেখে, তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। তারপর থেকে ছেলে-মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে তাঁর কাছে আসা যাওয়া করে। মা বেলারানি দেবী বলেন,’ছেলে আমাকে মাঝে মধ্যে টাকা পয়সা দিয়ে পাঠায়। আমার তিন ছেলে, দুই মেয়ে।’ এখন তাঁর সব থেকে কাছের ছেলে জীবনকৃষ্ণ। আর তাঁকেই সিবিআই দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করেছে। যা মা হয়ে মেনে নিতে পারছেন না বেলারানি সাহা। বর্তমানে খড়গ্রামের পারুলিয়াতে বাপের বাড়িতে থাকেন বেলারানি দেবী। প্রাণের ছেলে গ্রেফতার হওয়ায় চোখে জল মায়ের।
প্রসঙ্গত, ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান জীবনকৃষ্ণ সাহা। বাবা বিশ্বনাথ সাহার সাঁইথিয়ায় তেল মিল আছে। আলুর কোল্ড স্টোরেজের ব্যবসাও রয়েছে তাদের। বড়ঞাঁতে রেশন চালের ডিস্ট্রিবিউটর। একসময়ে পৈতৃক ব্যবসা দেখতেন জীবনকৃষ্ণ সাহা। কিন্তু সেই ব্যবসায় তিনি ক্ষতি করেছিলেন বলে অভিযোগ বিধায়কের বাবার। এপ্রসঙ্গে জীবনকৃষ্ণ সাহার বাবা বিশ্বনাথ সাহা বলেন, ছেলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক নেই। এমনকি তাঁর ব্যবসায় নানানভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে তাঁর ছেলে। মিড-ডে মিলের লাইসেন্স করতে গেলে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে।
বাবার স্পষ্ট কথা, ছেলে যদি দুর্নীতি করে থাকে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিক। এই বিষয়ে বা ছেলের এত বিশাল পরিমাণ সম্পত্তি নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। অভিযোগ করেন, ‘ছেলে আমার ব্যবসায় ক্ষতি করত। আমার সাথে সম্পর্ক ভালো না।’ উল্লেখ্য, ২০০৪-এ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান তিনি। তারপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে তাঁর আর কোনও যোগাযোগ নেই। ২০১৩-তে নানুরের দেবগ্রাম হাইস্কুলে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দেন। এরপর ২০২১-এ সেখান থেকে বদলি নিয়ে কুন্ডল হাইস্কুলে যোগদান করেন।
অভিযোগ, ২০১০ সালে তিনি প্রথম ১০ জনকে চাকরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। সেই ১০ জনকে চাকরি পাইয়েও দেন তিনি। তারপর থেকেই অন্যান্য জেলা থেকে চাকরির জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। ২০১০ থেকে ২০১৯- এই ৯ বছরে নিয়োগ দুর্নীতির বিশাল চক্র তিনি গড়ে তোলেন। বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নেটওয়ার্ক। ২০১৩ সালে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান তাঁর স্ত্রী। সেই একই বছর চাকরি পান তাঁর শ্যালকও। দুর্নীতির ১০ বছরের পাহাড় প্রমাণ সম্পত্তি গড়ে তোলেন জীবনকৃষ্ণ। সিবিআইয়ের স্ক্যানারে এখন তৃণমূল বিধায়ক ও তাঁর স্ত্রী টগরী সাহার সেই বিপুল সম্পত্তি।
সূত্রের খবর, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারি মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১২টি অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে। এর মধ্যে বিধায়কের নামে ৪টি ও তাঁর স্ত্রীর নামে ৩টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, বীরভূমেও জীবনকৃষ্ণের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সূত্রের খবর, বীরভূমের সাঁইথিয়া, তালতোড়, তাতারপুর, বাঁধগোড়া ছাড়াও মুর্শিদাবাদের আন্দিতে বিধায়ক ও তাঁর স্ত্রীর নামে একাধিক সম্পত্তি রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৮-১০ কোটি টাকা।
Abhishek Banerjee: নোটিসকাণ্ডে নাটকীয় মোড়! তথ্য তলব দিল্লির, অভিষেককে সিবিআই-এর নয়া চিঠি