History Of Kolkata : ডিরোজিওর জন্মভিটে এখন ডায়গনস্টিং সেন্টার! কলকাতার কোথায় রয়েছে এই ঐতিহাসিক বাড়ি? – henry louis vivian derozio house has now been turned into a diagnostic centre in kolkata


গৌতম বসুমল্লিক

আজ থেকে ঠিক চল্লিশ বছর আগে, ১৯৮৩ সালে, ‘United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization’ বা সংক্ষেপে UNESCO (ইউনেস্কো) ১৮ এপ্রিল তারিখটাকে ‘World Heritage Day’ বা ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ঠিক তার আগের বছর তিউনিশিয়ায় ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস (International Council on Monuments and Sites বা সংক্ষেপে ICOMOS)-এর সদস্য দেশগুলো এক আলোচনাসভায় মিলিত হয়ে ১৮ এপ্রিল তারিখটাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস’ হিসেবে পালন করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই ‘ইউনেস্কো’ পরের বছর থেকে দিনটাকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।

Kolkata News : কলকাতায় মিশর রহস্য! এই শহরে রয়েছে ৩ হাজার বছরের মমি, কোথায়?
উনিশ শতকের নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত ‘হিন্দু কলেজ’-এর অতি স্বল্পকালীন শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর জন্মদিনও ১৮ এপ্রিল। তিনি জন্মেছিলেন কলকাতাতে এবং তাঁর মৃত্যুও এখানেই। শহর কলকাতার বুকে এখনও টিঁকে ডিরোজিওর বাড়ি। কলকাতার পুরসভার ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকাতে রয়েছে এই ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বাড়িটা।

কলকাতার পূর্বপ্রান্তে সাবেক লোয়ার সার্কুলার রোডের (বর্তমান আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড) উপরে অবস্থিত বাড়িতে এক ইউরেশিয়ান পরিবারে ১৮০৯-এর ১৮ এপ্রিল হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর জন্ম। তাঁর জন্মস্থান তথা বসতবাড়িটির কোনও অস্তিত্ব নেই বলে তাঁর জীবনীকারদের অনেকে জানালেও, বাস্তবে কিন্তু আজও সেই বাড়ি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এই শহরের বুকে। ডিরোজিও প্রয়াত হন ১৮৩১-এর ২৬ ডিসেম্বর। হেনরির মাত্র বাইশ বছর আট মাসের সংক্ষিপ্ত অথচ কর্মময় জীবন অতিবাহিত হয়েছিল যে বাড়িতে থাকাকালীন, সামান্য পরিবর্তিত হলেও ইটের তৈরি সেই বিশেষ ধরনের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বাড়ির নিদর্শন হিসেবে ডিরোজিওর সেই বাড়ি এখনও দ্রষ্টব্য।

Kolkata News : রবি ঠাকুরের নামে আস্ত এক ডাইনোসোর আছে কলকাতায়! জানেন কোথায়?
ডিরোজিওর দুই জীবনীকার টমাস এডোয়ার্ড এবং ই ডবলিউ ম্যাজের বিবরণ থেকেই তাঁর বাসভবনটি প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে কলকাতার অন্যতম ইতিহাসকার ই এ কটন লেখেন, ‘‘লোয়ার সার্কুলার রোডের পূর্বদিকে ও এন্টালিমুখী রাস্তার দক্ষিণে ১৫৫ নম্বর বাড়িটি বিখ্যাত ইউরেশিয়ান কবি ও শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর জন্মস্থান। যেখানে তিনি ১৮৩১ সালে মাত্র ২৩ বয়সে মারা গিয়েছেন।’’

১৮১৫ সালে, হেনরির বয়স তখন মাত্র ছয় বছর তখন তাঁর জন্মদাত্রী মা সোফিয়া মারা যান। বাবা ফ্রান্সিস ডিরোজিও মারা যান ১৮৩০-এ। হেনরির দাদা ফ্রাংক এবং আরেক বোন সোফিয়া— দু’জনেই মারা যান ১৮২৭-এ হেনরির মৃত্যুর বছর চারেক আগে। তাই হেনরির মৃত্যুর পর দেনার দায়ে সে বাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তাঁর বিমাতা অ্যানা মেরিয়া রিভার্স, ভাই গিলবার্ট অ্যাস মোর বা ক্লড এবং বোন এমিলিয়া। তার পর বেশ কয়েকবার হাতবদল হয় বাড়িটার। কলকাতার আরেক ইতিহাসকার রাধারমণ মিত্র নিলাম হয়ে যাওয়া সেই বাড়ির পরবর্তী মালিকদের একটি তালিকা তৈরি করতে গিয়ে ওই ক্রেতাকুলের একজন নগেন্দ্রনাথ বসুমল্লিক সম্পর্কে জানান, ‘‘…১৯০৭ সালে ১৫৫ নং লোয়ার সার্কুলার রোডের বাড়িটি কিনে নিয়ে সেটা ভেঙে ফেলে তার জায়গায় মার্টিন কোম্পানিকে দিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে একটি বড় বাগান সমেত অট্টালিকা তৈরি করিয়ে সেখানে গিয়ে বাস করেন। অট্টালিকার নাম দেন ‘মিনার।’

Kolkata Yellow Taxi : কলকাতার ‘বিলুপ্তপ্রায়’ হলুদ ট্যাক্সি পুনরুজ্জীবিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ
নগেন্দ্রনাথ বসুমল্লিক ছিলেন স্বদেশি আন্দোলন ও জাতীয় শিক্ষা পরিষদ খ্যাত রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিকের জ্ঞাতি। ওই পরিবারের সূত্র থেকে জানা যায়, নগেন্দ্রনাথ নাকি ইউরোপ থেকে কারিগর আনিয়ে ওই বাড়িতে এমন একটা কাঠের সিঁড়ি তৈরি করিয়েছিলেন, যেটার প্রত্যেক ধাপে পা দিলে পিয়ানোর এক একটা সুর বেজে উঠতো। বিলাসী নগেন্দ্রনাথ অবশ্য সে বাড়ি নিজের অধিকারে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি।

রাধারমণ মিত্র বাড়িটির পুনর্নির্মাণ সম্পর্কে ঠিক তথ্য দিলেও, সেটা যে একেবারে ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন, পরবর্তী গবেষণায় জানা গিয়েছে তা ঠিক নয়। ‘ডিরোজিও স্মরণ সমিতি’ এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়ে সিদ্ধান্তে আসে যে, ১৫৫, লোয়ার সার্কুলার রোডের (বর্তমান আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড) ডিরোজিওর বাড়িটা ভাঙা হয়নি কোনও দিনও, কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। ‘ডিরোজিও স্মরণ সমিতি’ প্রকাশিত ‘ডিরোজিওর বাড়ি: নথিপত্রের আলোকে’ গ্রন্থে সমিতির সদস্য শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায় পুরসভার বিল্ডিং-বিভাগ ও অন্যত্র অনুসন্ধান চালিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন যে নগেন্দ্রনাথ বসুমল্লিক বাড়িটির কিছুটা পরিবতর্ন ঘটালেও মূল বাড়িটি এখনও প্রায় অক্ষুন্নই আছে।

Alipore Zoo : নতুন সাজে ‘ভার্চুয়াল সাফারি’ ফেরাবে আলিপুর চিড়িয়াখানা
ডিরোজিওর মৃত্যুর ১৫০ বছর স্মরণে ১৯৮১-র ২৩ ডিসেম্বর বাড়ির সামনের ফুটপাথে একটি স্মৃতিফলক লাগানো হয়। আগে প্রত্যেক বছর ওই দিন একটি অনুষ্ঠানও করা হত। সমিতির পক্ষ থেকে ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো বাড়িটা অধিগ্রহণের দাবী সম্বলিত আবেদন-পত্রে যাঁরা স্বাক্ষর করেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়, প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, বরুণ দে, সমীর রক্ষিত, নিমাইসাধন বসু প্রমুখ ২৮জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। যদিও সে বাড়ি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। সেখানে বর্তমানে রয়েছে একটা ডায়গোনোস্টিক সেন্টার ও নার্সিংহোম।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *