প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমাদের দেশে প্রায় ৬৫ শতাংশ শিশু (৫ বছরের নিচে) জন্মের পর রক্তাল্পতা বা হিমোগ্লোবিনের অভাবে ভোগে। মহিলাদের মধ্যে ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ ভোগের এই রোগে। এর ফলে, শিশু, মহিলা থেকে প্রসূতিদের নানা শারীরিক সমস্যা (যেমন- ক্লান্তি বোধ, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা প্রভৃতি) দেখা দেয়। তখনই পরীক্ষা করতে হয় রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিকঠাক আছে কিনা তা জানার জন্য। ছুটতে হয় কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। প্রায় ৩০০-৪০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু, হিমো অ্যাপের মাধ্যমে মাত্র ১-২ টাকা খরচ করলেই বাড়িতে বসে জানা যাবে রক্তে হিমোগ্লোবিন বা লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা ঠিকঠাক আছে কিনা। শুধু বাড়িতে থাকতে হবে লিকুইড গ্লিসারিন।
অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী জানান, ওই ফিল্টার পেপার গ্লিসারিনে ভিজিয়ে নিতে হবে। এরপর, মাত্র এক ফোঁটা রক্ত ওই ফিল্টার পেপারে ফেলতে হবে। মাত্র ২-৩ সেকেন্ড পর ফিল্টার পেপারের ওপর থাকা রক্তের ছবি স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে তুলে নিতে হবে। তারপর, ওই ছবি হিমো অ্যাপে আপলোড করতে হবে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অ্যাপ জানিয়ে দেবে আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিন ভালো রক্ত কণিকার পরিমাণ ঠিকঠাক মাত্রায় আছে কিনা।
সম্প্রতি, ‘ইনফোসিস পুরস্কার ২০২২’ (Infosys Award 2022) এ ভূষিত এই বাঙালি বিজ্ঞানী জানান, গ্লিসারিনে ভেজানো ফিল্টার পেপারে রক্তের ফোঁটা ফেললেই তা নির্দিষ্ট আকার ধারণ করবে। রক্তের সান্দ্র প্রকৃতি (আঠালো বা জমাটি ভাব) কম হলে তা আঙ্গুলের ছাপের মতো আকার ধারণ করবে। অপরদিকে, সান্দ্র প্রকৃতি বেশি হলে তা গোল আকারে ছড়াতে থাকবে। এই ছবিই অ্যাপে দেওয়ার সাথে সাথে, অ্যাপের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) প্রযুক্তি সঠিক ফলাফল জানিয়ে দেবে।
অধ্যাপক চক্রবর্তী’র এই আবিষ্কারে তাঁকে সহায়তা করেছেন আইআইটি খড়্গপুরের গবেষক সম্পদ লাহা। তাঁদের এই আবিষ্কার যে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন তা বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত, ফ্লুইড মেকানিক্স, ইন্টারফেসিয়াল ফেনোমেনা এবং মাইক্রো ও ন্যানো স্কেলে ইলেক্ট্রোমেকানিক্সের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য আইআইটি খড়্গপুরের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক তথা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডিন অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তীকে ইনফোসিস পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল গত নভেম্বর (১৫ নভেম্বর, ২০২২) মাসে।