পুলিশের চাকরি পেতে কোনও পুলিশকর্তার হাত ধরেই নিজেদের তৈরি হতে হবে। এই ভাবনা থেকেই ছ’মাস আগে ফালাকাটা থানার আইসির দ্বারস্থ হয়েছিলেন আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের ১৪ জন যুবক। তাঁদের আর্তি ও উদ্যম দেখে না করতে পারেননি আইসি সমিত তালুকদার। শেষ পর্যন্ত চাকরির পরীক্ষার অনুশীলনের ঠিকানা হয় আইসির ১৪ ফুট বাই ১৫ ফুটের চেম্বার।
কী ভাবে তৈরি হতে হবে, তা নিয়ে শুরু হয় প্রশিক্ষণ। অঙ্ক, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজির খুঁটিনাটি নিয়েও চলত অনুশীলন। সঙ্গে নিয়মিত শারীরিক কসরত। পুলিশি আদবকায়দার শিক্ষা। ওই ১৪ জন যুবক প্রত্যেকেই কনস্টেবলের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষাতেও আসে সাফল্য। শেষ পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষায় ডাক পান ৯ জন। চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, ৯ জনের ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়েছে। ‘ছাত্রদের’ এই সাফল্যে খুশি ফালাকাটার আইসি সমিত।
তিনি বলেন, “ওঁরা উৎসাহ নিয়ে এসেছিলেন। আমি দিশা দেখিয়েছি মাত্র।” আইসির ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী। তিনি বলেন, “এই দৃষ্টান্তের জন্যে পুলিশের উপর মানুষের আস্থা বেড়ে যাবে।”
পুলিশের চাকরির ব্যস্ততার মাঝে কী ভাবে ওই যুবকদের সাহায্য করতেন আইসি?
জানা গিয়েছে, প্রায় ছ’সাত মাস আগে কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদন করেন ওই যুবকরা।বন্ধুদের কাছে আইসির সাহায্যের কথা শুনে ফালাকাটা থানায় আসেন তাঁরা। তাঁদের নিয়ে একটা গ্রুপ করে দেন আইসি। যেহেতু বেলা বাড়তেই কাজের চাপ বাড়ে, তাই সাত সকালে উঠে ফালাকাটার পাশে কোচবিহার লাগোয়া মাঠে পৌঁছে যেতেন আইসি। আসতেন ওই যুবকরাও।
শুরু হয়ে যেত ঘণ্টা তিনেকের শারীরিক অনুশীলন। প্রথমে ওয়ার্ম আপ। তারপর গোটা মাঠে কয়েক পাক দৌড় শেষে ফের একশো মিটার রেস। সব শেষে বুক ডন দিয়ে ঘাম ঝড়িয়ে বাড়ি ফিরতেন ওই যুবকরা।
বিকেলে তাঁরা ফের পৌঁছতেন থানায়। শুরু হতো পড়াশোনা। নেওয়া হতো মক-টেস্ট। ছাত্ররা ভুলভ্রান্তি করলে, বকাঝকার বদলে ঠিক কী কারণে ভুল হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতেন আইসি। এ ভাবেই চলত টানা আড়াই ঘণ্টার পড়াশোনা।
ফালাকাটার গোপাল রায় বলেন, “রেজাল্ট দেখে বিশ্বাস করতে পারিনি। ঘোর কাটতেই মনে পড়ে গেল আইসি সাহেবের মুখ। তিনি পাশে না দাঁড়ালে এই সাফল্য কোনও ভাবেই পেতাম না।” ঘোকসাডাঙার রজত মল্লিক বলেন, “ভাবতে গর্ব হচ্ছে, এখন থেকে আমিও রাজ্য পুলিশ বাহিনীর একজন সৈনিক।”