এই অবস্থায় যাবতীয় নিয়োগ-দুর্নীতির মামলা শীর্ষ আদালত এক সঙ্গে শুনলে সমস্যা দূর হবে বলে আবেদন করা হয়েছে। সোমবার প্রধান বিচারপতির এজলাসে এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সৌমেন নায়ক-সহ আবেদনকারীদের আইনজীবী পার্থসারথি বর্মন। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের বহু শিক্ষক এবং গ্রুপ-ডি ও গ্রুপ-সি পদে বহু কর্মীর চাকরি গিয়েছে।
তাঁরাই এই আবেদন দাখিল করেছেন সুপ্রিম কোর্টে। আবেদনকারীদের আর্জি, যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট এই ধরনের মামলা আগে শুনেছে, তাই কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত মামলা সরানো হোক শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীদের বক্তব্য, এর আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা জানিয়েছিলেন, শ’য়ে শ’য়ে চাকরি বাতিল হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্যও শুনতে হবে। এই অবস্থায় একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হলে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির সম্ভাবনা বাড়বে।
স্কুলে অবৈধ নিয়োগের অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্ট কর্মচ্যুতির নির্দেশ দেওয়ার পরে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) বহু শিক্ষক-কর্মীর নিয়োগ-সুপারিশ প্রত্যাহার করেছিল। তবে সুপ্রিম কোর্ট গত ১২ এপ্রিল হাইকোর্টের সেই কর্মচ্যুতির নির্দেশ আপাতত কার্যকরী হবে না জানানোয় এসএসসি’ও গত দু’তিন মাসে জারি করা শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি মুলতুবি করেছে।
কমিশনের চেয়ারপার্সনের এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা বৃহস্পতিবার এসএসসি’র ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা কমিশনার, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি এবং ২৩ জন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর এজলাসে ফের শুনানি রয়েছে আগামী ২৬ এপ্রিল।
অন্য দিকে, প্রাথমিক, জুনিয়র ও হাইস্কুল, মাদ্রাসায় নিয়োগপ্রার্থী, সরকারি গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থী-সহ নানা স্তরে বঞ্চিত ১১ রকমের চাকরিপ্রার্থীরা শুক্রবার রাজভবনে ডেপুটেশন কর্মসূচি নিয়েছিলেন। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের ‘মহা ঐক্য মঞ্চে’র আহ্বায়ক আশিস খামরই জানান, দুর্নীতি ও বঞ্চনার প্রতিবাদে রাজভবন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল।
শহিদ মিনারের পাদদেশ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তায় আসা মাত্রই পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। চাকরিপ্রার্থীরা হামাগুড়ি দিয়েই রাজভবনে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ গাড়িতে তুলে নেয়। আশিসের দাবি, ‘আগাম জানানো সত্ত্বেও রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা হয়নি। তাঁর দপ্তরের সচিব পর্যায়ের এক আধিকারিক দেখা করেন।’
আশিসদের প্রশ্ন, ‘রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী বা সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল দেখা করছেন না। এই গরমে আমরা কি রাস্তায় পড়ে থাকব!’ তিন দফায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে আন্দোলনরত নবম-দ্বাদশের শিক্ষক পদপ্রার্থী যুব-ছাত্র অধিকার মঞ্চের আহ্বায়ক সুদীপ মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের অবস্থান-ধর্না ৭৬৮ দিন পেরোল।’ নবম-দ্বাদশের অন্য এক চাকরিপ্রার্থীর মন্তব্য, ‘আদালতের লড়াইয়ে আমাদের জীবনের অমূল্য সময় চলে যাচ্ছে!’