রথের দিনে গৃহস্থরা ‘পার্বণী’ হিসেবে সাধ্যমতো দান করেন। এই প্রথা রয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যেও। ঈদের দিন ‘ঈদি’ হিসেবে সাধ্যমতো অর্থদান করেন ওঁরাও। আর সেই অর্থেই দুর্গা প্রতিমা তৈরির বায়না দিয়ে পুজোর পরিকল্পনা শুরু করেন খিদিরপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যরা। বহু দশক ধরে চলে আসা এই প্রথা জারি রইল এই বছরও।
শনিবার ঈদে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিষ্টির আদানপ্রদানের পরই তোড়জোড় শুরু হলো প্রতিমা নির্মাণের। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অভিজিৎ দাস ‘এই সময়’-কে বলেন, ‘আমাদের পুজোয় বেশ কয়েকটা পুরোনো রীতি মেনে চলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিমা বায়না দেওয়া বিষয়টিও। প্রতি বছর আমরা ঈদের দিনে প্রতিমা তৈরির বায়না দিই। প্রাথমিক ভাবে প্রতিমা শিল্পীকে যে টাকা দিয়ে বায়না দেওয়া হয় সেটা আসে ঈদির দান থেকে।’
পুজো কমিটির সদস্যরা জানালেন, ১৯২৭ সালে এই পাড়ায় পুজো শুরু হয়। বিপ্লবী বারীণ ঘোষ এই পুজো চালু করেন। আসলে পুজোর আড়ালে এখানে অনুশীলন সমিতির কাজ করতেন বিপ্লবীরা। ঈদের দিনে ঈদির দানে পুজো শুরু করা ছাড়া অন্য আরও কিছু ঐতিহ্য মেনে চলা হয় এখানে। সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে অভিজিৎ বলছেন, ‘আমরা বাইরে থেকে কোনও পুরোহিত আনি না। কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকেই কেউ পুজো করেন। দক্ষিণা হিসেবে তাঁর হাতে একটি হরিতকী, একটি কড়ি এবং একটা পান তুলে দেওয়া হয়। এই ঐতিহ্যও শুরু থেকেই মেনে চলা হয়।’
পুজো কমিটির সদস্যরা জানাচ্ছেন, খিদিরপুরের এই এলাকায় উৎসব সফল করতে গেলে সবাইকে একজোট হতে হবে। কিছু মানুষ উৎসব পালন করবেন আর বাকিরা সামিল হবেন না-এমন হলে আর উৎসবের সার্থকতা কোথায়? এই কারণেই তাঁদের দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় ঈদের দিন থেকে। এমনটা হয়ে আসছে, এমনটাই হবে।