পিয়ালি মিত্র: পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নয়া মোড়। পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার এফআইআর রুজু করল সিবিআই। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের নির্দেশ মেনেই এফআইআর রুজু করল সিবিআই। অয়ন সিল সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করল সিবিআই। একথা বলাই যায় যে, পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তভার হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগোল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার অয়ন শীলের বাড়িতে উদ্ধার করা নথির তথ্য মুখবন্ধ খামে আদালতে জমা দেয় ইডি। ইডির সেই রিপোর্টে মিলেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। অয়ন শীলের বাড়িতে পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করেছে ইডি। উদ্ধার হওয়া নথিতে কাঁচড়াপাড়া, নিউ ব্যারাকপুর, টিটাগড়, বরানগর, কামারহাটি, হালিশহর, দক্ষিণ দমদম, উত্তর দমদমের মত একাধিক পুরসভার নাম রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। ইডির দাবি, অপরাধ সংঘটিত করার পিছনে রয়েছে উচ্চ প্রভাবশালী ব্যক্তি। পুরসভার নিয়োগে রাজনৈতিক নেতাদের মদত রয়েছে। ওএমআর কারচুপি করে বেআইনি নিয়োগ করা হয়। চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কম করে ২০০ কোটি টাকা আয় করেছেন অয়ন শীল।
ইডি এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরই পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে শুক্রবার বড় নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, সিবিআই চাইলে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তও করতে পারে। কারণ তাঁর মতে, দুর্নীতির জাল অনেক দূর দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে। তাই চাইলে ইডির রিপোর্টের সূত্র ধরে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করতে পারে সিবিআই। তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই। এপ্রসঙ্গে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেন, ‘পুর নিয়োগের তদন্ত করতে পারবে সিবিআই। এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করতে পারবে।’ যার জবাবে সিবিআইও জানায় যে, তারা তদন্ত করতে রাজি। সিবিআই বলে,’আদালত নির্দেশ দিলে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করতে রাজি।’ এরপরই এদিন পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অয়ন সিল সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করল সিবিআই।
উল্লেখ্য, ইডির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মাত্র ১০ হাজার টাকা আয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ১০ হাজার টাকা উপার্জনের জন্য খেটে মরছেন। আর এক-একজনের কাছে এত এত টাকা! অর্পিতা মুখোপাধ্যায়েরদের কাছে এত টাকা আসে কোথা থেকে? একাংশ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কোটি কোটি টাকা! আসছে কোথা থেকে? এইসব নেতাদের ছুঁলেই কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। আর সাধারণ মানুষকে ছুঁয়ে দেখুন বাজারে তাদের কত দেনা আছে। সাধারণ মানুষের সব জানা উচিত। দুটো, চারটে, পাঁচটা ব্যাবসা থাকলেই কেউ দেশের মালিক হয়ে যায় না। কারণ, দেশের আসল মালিক তার জনগণ।’ গোটা তদন্তপ্রক্রিয়ায় সেদিন ইডির কাজের প্রশংসাও করেন বিচারপতি। পাশাপাশি, সিবিআই যদি তদন্ত করে, তবে রাজ্য প্রশাসনকে সম্পূর্ণ সহযোগিতারও নির্দেশ দেন তিনি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় সেদিন বলেন,’তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিসকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে, যখনই তদন্তকারী সংস্থা সাহায্য চাইবে। ডিজি এবং মুখ্য সচিবকে এটা সুনিশ্চিত করতে হবে।’ এখন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই-এর তদন্তের জল কোনদিকে গড়ায়, সেটাই দেখার। ওদিকে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের পাহাড় প্রমাণ সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে ইডি। সূত্রের খবর, একটা-দুটো নয়, ১৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে অয়ন শীলের। গত এক সপ্তাহে আরও ৮টি ফ্ল্যাটের কথা জানতে পেরেছেন ইডি-র তদন্তকারীরা। এছাড়াও, অয়নের নামে-বেনামে প্রায় ৫০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেরও হদিশ মিলেছে। অয়ন ঘনিষ্ঠ শ্বেতা চক্রবর্তী এবং অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজোন প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মীদের নামেও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল বলে ইডি সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন, Tapas Saha: বিধায়কের বাড়ির বাগানে মহানন্দে খাসির মাংসে পিকনিক, নিজে হাতে খাওয়ালেন তাপস সাহা!