সিবিআইয়ের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০২২-এর গোড়ার দিকে দু’মাসের মধ্যে প্রবীরের অ্যাকাউন্টে প্রায় দু’কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তা কী ভাবে হলো, এর সঙ্গে তাপসের যোগ আছে কি না এবং এ ভাবে ঘুরপথে নিয়োগ দুর্নীতির টাকাই প্রবীরের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়েছে কি না – সে ব্যাপারে বিশদে জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্তকারীরা।
পাশাপাশি তাপসের নিজের চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং তাঁর স্ত্রী-পুত্র ও পরিবারের অন্য সদস্যদের অ্যাকাউন্টের লেনদেনও সিবিআই-স্ক্যানারে।
দীর্ঘ তল্লাশির পরে গত শনিবার সকালে তাপসের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তদন্তকারীরা। তারপর অবশ্য প্রবীরের বাড়ি, তাপসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নদিয়া জেলা তৃণমূলের নেত্রী ইতি সরকারের বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। দুপুরের দিকে তদন্তকারীরা এলাকা ছাড়েন।
আর শনিবার সন্ধেবেলা বিধায়কের বাড়িতে বসে খাওয়াদাওয়ার আসর। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের রীতিমতো কব্জি ডুবিয়ে ভাত-খাসির মাংস খেতে দেখা যায়। সিবিআই চলে যাওয়ার পরই বিধায়কের বাড়িতে এই পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। যদিও বিধায়ক রবিবার বলেছেন, ‘ঈদে আমি প্রতি বছরই বেরোই। কাল (শনিবার) বেরোতে পারিনি।
কারও সঙ্গে কথা হয়নি। কর্মীরাও বিভ্রান্ত ছিল। তাই সিবিআই চলে যেতে ওরা অনেকে এসেছিল। কয়েকজন খাসি এনেছিল। রান্না করেছে, আমাকেও খাইয়েছে। সবাইকে খাইয়েছে।’ এরপর খানিক শ্লেষের সুরেই তাঁর সংযোজন, ‘জেলে যেতে হলে যাব। এখানে খাচ্ছি। জেলে গিয়ে খাব।’
তবে গত ক’দিনের মতো এ দিনও এই তৃণমূল বিধায়কের গলায় ছিল দলের একাংশের প্রতি অভিমানের সুর। তাঁর বক্তব্য, ‘একজন কর্মী হিসেবে আমি দলের জন্য যে সময় দিই, অন্য কেউ দেন বলে মনে হয় না। সে দিক থেকে দলের একজন কর্মী হিসেবে আশা করতে পারি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই বিপদের দিনে অন্তত কথাবার্তার মাধ্যমে আমার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। সেটা পাইনি। দলের জেলা নেতৃত্বেরও হেলদোল নেই।’
শনিবারই রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তাপসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, কেউ কোনও অন্যায় না-করলে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। রবিবার আর এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় তাপসের ক্ষোভের প্রেক্ষিতে বলেন, ‘আমি তৃণমূল থেকে প্রথম বিধায়ক হয়েছিলাম। কিন্তু দল ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে আমি তো মন্ত্রী ছিলাম না।
এ নিয়ে আমি কখনও প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাইনি। দল অবহেলা করছে বলেও জানাইনি। ফলে এ ধরনের কথা ঠিক নয়।’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘যদি সবার বিষয়ে ওঁর অভিযোগ থাকে, তা হলে ধরে নিতে হবে, ওঁর নিজের কোনও সমস্যা আছে।’
এ দিকে, সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল – এই মাস দুয়েকে প্রবীরের একটি অ্যাকাউন্টেই ১ কোটি ৪২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ঢুকেছিল। অন্য একটি অ্যাকাউন্টে ৬১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা ঢুকেছিল। এই টাকা কোথা থেকে এল, তাপসই কারও মাধ্যমে তা প্রবীরের অ্যাকাউন্ট মারফত লেনদেন করেছেন কি না, সে সব খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
যদিও এ প্রসঙ্গে তাপসের বক্তব্য, ‘প্রবীর নামে আমার কোনও আপ্ত সহায়ক ছিল না। ওই লেনদেনের বিষয়েও আমি কিছু জানি না।’ কুণাল বলেন, ‘তদন্তের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। দল এগুলো কাউকে করতে বলেনি। কে কোথায় কী বলছেন, সেগুলো তদন্তের বিষয়। দল এর মধ্যে ঢুকবে না।’
শনিবার সকালে নদিয়ার আসাতুল্লানগরের বাসিন্দা ইতির বাড়িতেও তল্লাশি চালায় সিবিআই। সামাজিক মাধ্যমে তাপসের সঙ্গে ইতির ছবিও সামনে এসেছে। এ নিয়ে দু’জনকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিরোধীরা। শনিবারই ইতি বলেছিলেন, ‘ওঁকে আমি কাকু বলি। উনি আমার বাবার মতো।’ রবিবার তাপসও বলেন, ‘ইতি আমার মেয়ের মতো। ওকে শ্রদ্ধা করি।
ভালোবাসি। আমি ওর বাবার মতো। আমার বয়স ৬৪। ওর বয়স কত হবে, ২৬! আমার ছেলের বয়সি, কি তার থেকে একটু বড়। ও খুব ভালো মেয়ে। ওর বাড়িতে কেন তল্লাশি চালানো হবে? ও গরিব বলে!’