সহজ পাঠ।
অতীতকে আঁকড়ে বাঁচা বাঙালি কি তাঁর শিকড় এত সহজে ছাড়তে পারে? সামনেই ২৫ শে বৈশাখ, কবিগুরুর জন্মদিন। তাই কবিগুরুকে শ্রদ্ধার্ঘ্যের পাশাপাশি সৈকতসুন্দরী দিঘার সাজসজ্জায় বৈচিত্র্য আনতে সহজ পাঠকেই আশ্রয় করে নিল দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। পুরাতন দিঘার সৈকতাবাস আবাসনের ঠিক সামনে তৈরি হচ্ছে দিঘার প্রথম বিশ্ব বাংলা উদ্যান। সেখানে জেলাশাসকের বাংলো কল্যাণ কুঠিরের দেওয়ালে সহজ পাঠ বইয়ে রবীন্দ্রনাথের ছড়ার সঙ্গে যেভাবে নন্দলাল বসু ছবি এঁকেছেন, হুবহু সেই লেখা ও ছবিই তুলে ধরা হচ্ছে দিঘায়।
সৈকত সুন্দরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এবার সহজ পাঠই থিম। ‘ছোট খোকা বলে অ আ, শেখেনি সে কথা কওয়া’। প্রথম ভাগ ‘সহজ পাঠ’ বইয়ে স্বরবর্ণ পর্যায়ে প্রথমে খুঁজে পাওয়া ছোট খোকাকে। আর বড়দের মধ্যে ‘বড়ো বৌ’টিকে। ‘ডাক পাড়ে ও ঔ, ভাত আনো বড় বৌ’। জ্বলন্ত উনুনের ওপরে ভাতের হাঁড়িতে চাল ফুটছে, আর উনুনের সামনে পিঁড়িতে অনেকটা উবু হয়ে বসে ছবির সেই বড় বউ।কী সুন্দর গৃহস্থ বাড়ির সেই বড় বউটি! ডান হাতে ভাতের হাঁড়িতে কাঠি দিচ্ছে। কে ওই ‘ও ঔ? সে কি শ্বশুর, না কি শাশুড়ি, না কি তার স্বামী? কীরকম একটা আদেশের ভঙ্গি! বউমার মুখে- চোখে ভাব— হ্যাঁ হয়ে আছে। ফ্যানটা গেলেই যাচ্ছি যাচ্ছি। সাদা-কালো ছবিতে তার কালো মুখে গভীর পরিশ্রম আর উদ্বেগের ছবি। বইয়ে কবিতার চেয়ে বেশি কথা বলেছে শিল্পীর ছবি। ঠিক সেভাবেই বিশ্ব বাংলা উদ্যানের দেওয়াল জুড়ে সাদা-কালো রঙে জেগে উঠছে খোকার অবয়ব, বাদল দিনের কথা ইত্যাদি। যা আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে গোটা উদ্যানের অন্দরসজ্জাকে।
দেওয়াল জুড়ে পানের পিক কিংবা বিজ্ঞাপনী আবর্জনায় দৃশ্যদূষণ চিরাচরিত ঘটনা। পর্ষদ কর্তাদের আশা, এই নান্দনিক দৃশ্য তা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক মানসকুমার মণ্ডল বলেন, ”এর আগে বিশ্ব বাংলা উদ্যানে দাবার বোর্ড- সহ বিভিন্ন মডেল, বিবেকানন্দের মূর্তি বসানো হয়েছিল। তবে কবিগুরুর সাহিত্য সৃষ্টিকে ব্যবহার করে সৌন্দর্যায়ন এই প্রথম।”
World Book Day 2023 : নিখাদ বইপ্রেমীরাও ঘুরে আসতে পারেন দিঘা থেকে!
এখানেই শেষ নয়, তিনি জানিয়েছেন, ”সহজ পাঠের স্বরবর্ণ পর্যায়ের সবকটি লেখা ও ছবি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পুরো দেওয়াল জুড়ে। ইতিমধ্যেই অনেকটাই এগিয়েছে সে কাজ। বাকি কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। পর্যটকরা এসব প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।আমাদের আশা সহজ পাঠের এই চিত্রাঙ্কন পর্যটকদের আরও বেশি আবেগঘন করে তুলবে। আর দেওয়ালজুড়ে এমন চিত্র ফুটে উঠলে দূশ্যদূষণ থেকেও মুক্তি মিলবে।” কবিগুরুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে এবং সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে উন্নয়ন পর্ষদের এমন উদ্যোগ যা প্রশংসা কুড়োচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটক সকলেরই।