এই সময়:হাতের আংটিগুলো আর নেই। বিপদ তাড়ানো তাগাটুকুও বাঁধা নেই আর হাতে। প্রচণ্ড গরমে যেন ঝলসে গিয়েছে গোটা শরীর। আঙুল আর কব্জির সাদাটে দাগগুলো প্রমাণ করছে, সদ্যই আংটি-তাগা ত্যাগ করেছেন তিনি। যদিও এ নিয়ে আফশোসের শেষ নেই জেলবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। সোমবার আলিপুর আদালতে তোলা হয় তাঁকে।
গত সপ্তাহেই পার্থকে প্রভাবশালী প্রমাণ করতে আদালতে ইডি যুক্তি দিয়েছিল – জেলের আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রাক্তন মন্ত্রীকে অলঙ্কার পরার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাল, বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সশরীরে হাজিরা দিতে হবে প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে। আর সোমবার ঘনিষ্ঠ মহলে পার্থ দাবি করলেন, ‘কী আছে…! আমার আংটি, তাগা খুলে দিতে কোনও অসুবিধে তো নেই।
কিন্তু আমি ব্রাহ্মণ বাড়ির সন্তান। আমার ধর্মাচরণে এ ভাবে বাধা দেওয়া যায় কি?’ এ প্রসঙ্গে পার্থর সংযোজন, ‘ইডি অফিসেও তো দেখেছিলাম মা কালী, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ছবি আছে। ওরা ধর্মাচরণ করতে পারলে আমি পারব না কেন? তা হলে কেন জেলে ঈদ পালিত হয়, পুজো হয়? কেন জেলের মধ্যে মন্দির, মসজিদ আছে?’
গত ক’দিনের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ছাপ পড়েছে এক সময়ের ডাকসাইটে এই রাজনৈতিক নেতার শরীরে। জেলে কেমন করে কাটল তাপপ্রবাহের দিনগুলো? পার্থর জবাব, ‘গরমে কষ্ট পেয়েছি। শরীরটাও তাই ভালো নেই। কিন্তু এই কষ্ট আমার সয়ে গিয়েছে। আমি বড় কর্পোরেটের ঠান্ডা ঘর, এসি গাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে পতাকা ধরেছি। রাজনীতি করেছি। তখন তো কোনও এসি ছিল না। সেটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।’
গত বছর ২২ জুলাই ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন পার্থ। তারপর কারাগারে কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ন’মাস। এখন কী করে সময় কাটান এক সময়ের ব্যস্ততম এই প্রাক্তন মন্ত্রী? পার্থ বলেন, ‘আমি জেলে বসে বসে গীতা পড়ি। আবার লাইব্রেরি থেকে অনেক বই এনে পড়ছি।’ কী বই? জানান, গত ক’দিনে সুচিত্রা ভট্টাচার্য, বুদ্ধদেব গুহর লেখা একাধিক বই শেষ করেছেন। আর এখন? পার্থর কথায়, ‘এখন পড়ছি সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের বই। জীবন নিয়ে যে এমন হাসি-খেলা করা যায়, সেটা ওঁর বই পড়ে শিখছি। মনটাও ভালো থাকে।’
পাশাপাশি অবশ্য আকার-ইঙ্গিতে পার্থ এ দিন বারবারই বোঝাচ্ছিলেন, শরীরটা একেবারে ভালো নেই। কখনও আবার আদালত কক্ষে পাশে বসে থাকা, আর এক জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষাকর্তা শান্তিপ্রসাদ সিনহার দিকে তাকিয়ে থাকেন। এ দিন এজলাসের মধ্যেই স্ত্রীর চোখে আই ড্রপ দিচ্ছিলেন শান্তিপ্রসাদ। তাই দেখে শান্তিপ্রসাদকে পার্থ জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী হয়েছে গো?’ উত্তর দেন শান্তিপ্রসাদের স্ত্রী। জানান, তাঁর চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ চলে যাচ্ছে। দিনে ১৫-২০ বার আই ড্রপ দিতে হয়। সে কারণেই গত ক’দিন শুনানিতে হাজির থাকতে পারেননি। এ কথা শুনে পার্থ তাঁকে বলেন, ‘সাবধানে থাকবেন।’
এতদিন আদালত চত্বরে মাঝেমধ্যেই পার্থকে ‘চোর’ স্লোগানের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ দিন তেমন কিছু হয়নি। বরং তাঁর বিধানসভা এলাকা থেকে পার্থর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন অনেকে। যাঁদের অনেকেই বয়সে বেশ নবীন। সওয়াল-জবাব শেষ হওয়ার পর পার্থর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখা যায় এঁদের কয়েকজনকে। পার্থ বলেন, ‘তোরা সকলে ভালো থাকিস রে। সকলের খেয়াল রাখিস।’