সেই টাকা আবার তাঁদের কড়ায়-গন্ডায় শোধও করতে হতো। এহেন ‘ব্যাঙ্কিং’ সিস্টেমের এই চার কান্ডারি হলেন তাপস মণ্ডল, গোপাল দলপতি, কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দোপাধ্যায়। তবে অঙ্কের স্যর গোপালই ঋণ দিতেন বেশি। ইডি সূত্রের খবর, বেসরকারি বিএড কলেজের মালিক তাপসের অধীনে একসময়ে কাজ করতেন গোপাল। ঘটনাচক্রে গোপালের থেকেই ঋণ নিয়েছিলেন তাপস। তা-ও একেবারে দশ কোটি টাকা! তার উল্লেখও রয়েছে ইডি-র সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে।
অযোগ্যদের চাকরির সূত্রে গোপাল কাছে বিপুল টাকা এসেছিল। অন্যদের থেকে গোপাল অনেক হিসেবি ছিলেন। সে কারণে টাকার দরকার পড়লেই হাত পাততেন তাপস। জানা যাচ্ছে, অযোগ্যদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা তুলেছিলেন দু’জনে। মদত দিতেন কুন্তল এবং শান্তনু। তাঁরা আলাদা এজেন্টে নিয়োগ করে অযোগ্যদের চাকরির বন্দোবস্ত করলেও, তাপস এবং গোপালের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।
টাকার কোনও সমস্যা হলে নিজেরাই বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা করতেন। তদন্তকারীরা মনে করেছেন, এই চক্রটি সংগঠিত ভাবে কাজ করত। দুর্নীতির পিরামিডের উপরের বসে থাকা ব্যক্তিদের কাছে টাকা পৌঁছে দিতে কোনও খামতি রাখতেন না অভিযুক্তরা।
ওই ৩৪ কোটি টাকার মধ্যে গোপাল নিয়ে ছিলেন ১৬ কোটি, আর ১৮ কোটি রেখেছিলেন তাপস। পরে আবার গোপালের থেকে ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মোট ২৮ কোটি টাকা নিজের কাছে রাখেন তাপস। সংবাদমাধ্যমকে দেখলে যে তাপস বিস্ফোরক মন্তব্য করে থাকেন, তাঁর মুখে কোনও দিনই ১০ কোটি টাকা ঋণের বিষয়ে শোনা যায়নি।
আলিপুর আদালতের বাইরে কুন্তলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি তাপস ৫০০ কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগও এনেছেন। কিন্তু গোপালে বরাবরই চুপ! কেন গোপালের কীর্তির বিষয়ে তাপস মুখ খুলছেন না, তা খতিয়ে দেখছে ইডি এবং সিবিআই। গোপাল এখনও গ্রেপ্তার হননি। সিবিআই তাঁকে বেশ কয়েক বার তলব করলেও, তিনি নানা হাজিরা এড়িয়ে যাচ্ছেন।
তাপস, কুন্তলদের জেরা করে আরও জানা গিয়েছে, প্রাথমিকে নিয়োগই শুধু নয়, তাঁরা টার্গেট করেছিলেন সংগঠক শিক্ষকদেরও। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে পড়ুয়াদের পড়ালেও, সরকারি স্বীকৃতি পাচ্ছিলেন না তাঁরা। সেই ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন তাপস-গোপালরা। রাজ্যের ২৬০০ জন সংগঠক শিক্ষককে নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করার প্লট সাজানো হয়।
ইডি সূত্রে খবর, মামলা নিয়ে ‘নবপর্যায় ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি অর্গানাইজার টিচারর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে তাপস মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এর পর শিক্ষকদের ভুল বুঝিয়ে ১২০০ প্রার্থীর থেকে ২০ হাজার করে নেওয়া হয় আদালতে দু’টি মামলা করার জন্য।