উৎসশ্রী পোর্টালে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই ওঁরা কেউ কেউ বাড়ির কাছাকাছি বদলির আবেদন করেছিলেন। শারীরিক কারণ, বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব, বাড়িতে ছোট বাচ্চা এবং স্বামী বা স্ত্রী’র কর্মস্থলের দূরত্বের নিরিখে নির্দিষ্ট পয়েন্ট বা নম্বরও বরাদ্দ ছিল। সব শর্ত পূরণ ও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই বেশ কয়েক জন শিক্ষিকার বাড়ির কাছাকাছি বদলির সুপারিশ কার্যকরী হয়েছিল। কিন্তু সওয়া এক বছর-দেড় বছরের মধ্যেই ফের বাড়ি থেকে অনেক দূরের স্কুলে বদলির চিঠি হাতে পেলেন রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকাদের একাংশ।
ফলে প্রবল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে কলকাতার মুদিয়ালিতে দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন ফর গার্লসে উৎশ্রীর পোর্টালের মাধ্যমে ২০২২-এর ২৫ জানুয়ারি বদলি হয়ে এসেছিলেন ইংরেজির এক শিক্ষিকা। কিন্তু ১৮ এপ্রিল স্কুল সার্ভিস কমিশন বাইপাসের ধারের বাসিন্দা ওই শিক্ষিকাকে ফের বদলির সুপারিশ করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর নারায়ণতলা রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরে।
একই অভিজ্ঞতা যাদবপুরের হালতু বিদ্যাপীঠের ইংরেজির শিক্ষিকার। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে উৎসশ্রীর মাধ্যমে কালিকাপুরের ওই বাসিন্দা হুগলির সিঙ্গুরের শ্রীরামপুর বিজনবিহারী বালিকা বিদ্যালয় থেকে বদলি পেয়েছিলেন বাড়ির কাছে। কিন্তু দেড় বছর না যেতেই তাঁকে বদলি করা হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের মিলন বিদ্যাপীঠে। ২০২১-এর ২ অগস্ট থেকে উৎসশ্রীর মাধ্যমে বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে বদলি পাওয়া অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই ‘প্রশাসনিক বদলি’র যুক্তিতে ফের ১০০ কিলোমিটার বা তার থেকেও দূরে বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
মুদিয়ালি ও হালতুর স্কুলের দুই শিক্ষিকারই দাবি, স্কুলশিক্ষা দপ্তরের নির্ধারিত শর্ত মেনেই উৎসশ্রীতে বদলির আবেদন করেছিলেন। সব দিক খতিয়ে দেখেই দপ্তর, স্কুলশিক্ষা কমিশনার এবং এসএসসি বদলির আবেদন কার্যকরী করেছিল। যার ভিত্তিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদও নিয়োগপত্র দিয়েছিল। কিন্তু ১৫-১৮ মাসের মধ্যে ফের ১০০-১২০ কিলোমিটার দূরে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে!
স্কুলশিক্ষা দপ্তরের এক কর্তার বক্তব্য, স্কুলে-স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষক অনুপাত বিবেচনা করেই আদালতের নির্দেশ মেনে এই সিদ্ধান্ত। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির অনিমেষ হালদারের পাল্টা বক্তব্য, ‘স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে মূল সমস্যার সমাধান না করেই শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তাদেরও অনেকের আশঙ্কা, এতে হিতে বিপরীত হবে। তবে বিকাশ ভবন থেকেই এসএসসি-র কাছে শিক্ষকদের নাম ও কোড নম্বর, স্কুলের নাম ও কোড নম্বর এবং পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাতে বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদের তালিকা দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।