সুতপা সেন: আদিবাসী কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল তাণ্ডব হয়েছে কালিয়াগঞ্জে। ডেপুটেশন দিতে এসে কালিয়াগঞ্জ থানায় তাণ্ডব চালিয়েছে আদিবাসী সংগঠনের সদস্যরা। থানার পাঁচিল ভেঙে, থানায় আগুন দিয়ে তাণ্ডব করে জনতা। পাশাপাশি পুলিসদের ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করে বিক্ষোভকারীরা। ওই ঘটনার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আতঙ্কে প্রাণভিক্ষা চাইছেন পুলিস কর্মীরা। এনিয়ে এবার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সাফ কথা, কেন পুলিসের ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর? যারা পুলিসকে মেরেছে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন। বিহার থেকে লোক এনে গোলমাল করা হয়েছে। যারা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করেছে তাদের সম্পত্তি থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- নাবালিকার রহস্য মৃত্যুতে ফুঁসছে কালিয়াগঞ্জ, থানায় আগুন উত্তেজিত জনতার
বুধবার নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলার বিরুদ্ধে নানারকম চক্রান্ত চলছে। তাই মিডিয়াকে এনিয়ে সতর্ক থাকতে বলব। কালিয়াগঞ্জের কেসে কিছু জায়গায় মৃত কিশোরীর নাম দেখানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নিষেধ রয়েছে। কালিয়াগঞ্জের ঘটনার তদন্ত হবে। বিজেপি যে তাণ্ডব করেছে তার খোঁজ খবর করা হবে। নিহতের পরিবারের পাশে আমরা রয়েছি। কিন্তু বিহার থেকে লোক নিয়ে এসে কাল গাড়ি, ঘর পুড়িয়ে, লুঠ, গুন্ডামি জল্লাদগিরি করা হয়েছে। এমনকি মহিলা পুলিসকর্মীদের উপরেও হাত তোলা হয়েছে। যেভাবে তাদের উপরে হামলা হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত করতে বলব পুলিসকে। একদিকে মৃত কিশোরীর মামলার তদন্ত হবে। যখন ওই কিশোরীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন পুলিসের উপর পাথর ছোড়া হচ্ছিল। ওইভাবে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি। আমরা ঠিক করেছি ডেড বডি নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগ দিয়ে দেব।
মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় থানায় আগুন দিয়ে,গাড়ি পুড়িয়ে, থানার পাঁচিল ভেঙে তাণ্ডব করেছে জনতা। এনিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পুলিসকে বলব যারা হাঙ্গামা করেছে তাদের দল দেখার প্রশ্ন নেই। সোজাসুজি গ্রেফতার করুন। তাদের সম্পত্তি অ্যাটাচ করুন। ইডি-সিবিআই এটা করে। ওদের ওই আইনটা আছে। আমরাও ওই আইনটা করেছি। কেউ যদি বলে আমার সম্পত্তি নেই তাহলে নিশ্চয় তার বাবার সম্পত্তি আছে। সম্পত্তি অ্যাটাচ করবেই। তা না হলে এই গুন্ডাগিরি কমবে না। আর বিজেপি যদি টাকা দিয়ে সাহায্য করে তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আই আইনের পথেই চলবে।
এলাকার কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল কালিয়াগঞ্জ থানায় ডেপুটেশন দিতে যায় রাজবংশী তপসিলি ও আদিবাসী সংগঠনগুলির সমম্বয় কমিটি। ওই ডেপুটেশনকে কেন্দ্র করে পুলিসের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের খণ্ডযুদ্ধে বেধে যায়। বারবার পুলিস আন্দোলনকারীদের দিকে তেড়ে গেলেও জনতাকে ঠেকিয়ে রাখতে হিমসিম খেয়ে যায় পুলিস। ব্যারিকেড ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় জনতা। বৃষ্টির মতো ইট এসে পড়তে থাকে পুলিসের উপরে। পাল্টা তেড়ে যায় পুলিসও। বিক্ষোভকারীরা থানার পাঁচিল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি থানা চত্বরে বেশকিছু জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া যায়। প্রসঙ্গত, আগাবাসী সংগঠনগুলি আজ এসেছিল ওই নাবালিকার মৃত্যুর প্রতিবাদে থানায় ডেপুটেশন দিতে। তার পরেই ঘটে য়ায় এমন ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামে কমব্যাট ফোর্স। কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়েও জনকাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পুলিস।
লোকজনের সমাবেশ ঘিরে থানার কাছেই রাস্তার উপরে ব্যারিকেড খাড়া করে দেয় পুলিস। সেই ব্যারিকেডে বাধা পেতেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে জনতা। তার পরেই থানার দিকে তেড়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। ভেঙ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় থানার পাঁচিল। রাস্তার পাশের দোকান, প্যাসেঞ্জার শেড ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরই বিক্ষোভকারীরা তেড়ে যায় থানার কোয়ার্টারে। সেখানে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে কোয়ার্টার। রাস্তার উপরে বিছিয়ে পড়ে থাকা ইট দেখলেই বোঝা যায় কী পরিস্থিতি হয়েছিল। মুহুর্মূহু কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাঁটার শব্দে তোলপাড় হয়ে ওঠে এলাকা।