জেল সুপারের ব্যাখ্যায় অসন্তুষ্ট আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘আইনের তোয়াক্কা না করেই একজন বিচারাধীন বন্দির প্রতি জেল সুপারের দরদ ফুটে উঠেছে। তিনি নিজেকে যতটা ইনোসেন্ট ব্যাখ্যা করতে চাইছেন, বিষয়টি মোটেই তেমন নয়।’ ৯ মাস ধরে যে আংটি তিনি খোলাতে পারেননি তা ৯ মিনিটে কী করে খোলানো গেল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিচারক। এডিজি আইজি (কারেশনাল সার্ভিসেস)-কে বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, দেবাশিসের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো তা আদালতকে জানাতে হবে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আদালতে ইডি পার্থকে প্রভাবশালী প্রমাণ করতে অভিযোগ করে। যেখানে বলা হয়, তিনি এখনও এতটাই ক্ষমতাবান যে জেল কোড ও আইনের তোয়াক্কা না করে তাঁকে অলঙ্কার পরার সুবিধে করে দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগের পরে ব্যাঙ্কশাল আদালতে জেল সুপারকে সশরীরে লিখিত ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ দিন আদালতে টাইপ করে নিজের উত্তর নিয়ে এলেও বিচারক তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালত কক্ষেই হাতে লিখে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
জেল সুপারকে বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘জেল হেফাজতে যখন প্রথম পাঠানো হয়েছিল, ওই দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতের আংটি ছিল তার কোনও রিপোর্ট আছে? আপনি এখানে লিখেছেন ওই দিন ওর হাত ফোলা ছিল, ফলে আংটিগুলি খোলা সম্ভব হয়নি।’ জবাবে সুপার বলেন, ‘পার্থ দরখাস্ত দিয়েছিলেন।’ কিন্তু সেই দরখাস্ত নেওয়ার কোনও আইনি পথ কি সুপারের কাছে রয়েছে? জানতে চান বিচারক।
জবাব আসে, ‘না নেই।’ সে ক্ষেত্রে কেন জেল সুপার সেটি আদালতে জানানোর জন্য নোট রাখলেন না? কেন তা রেজিস্টারে লেখা হলো না? বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে সুপারের বক্তব্য, ‘আমায় ক্ষমা করবেন। আমি ভেবেছিলাম, ওই আবেদনই প্রমাণ।’ যদিও নির্দেশনামায় বিচারক জানিয়েছেন, তাঁর ব্যাখ্যা এবং ক্ষমা প্রার্থনা কোনওটাই আদালত গ্রাহ্য করেনি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেদিন প্রথম জেলে যান, সেদিনের মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখে বিচারক বলেন, ‘আমি কোথাও প্রমাণ পেলাম না ওঁর হাত ফোলা ছিল। আপনি বলছেন গত নয় মাস আংটি খোলা গেল না।
কিন্তু আমার কাছে আগের দিন শুনানিতে বলা হলো, তিনি নিজেই আংটি খুলেছেন। ৯ মিনিটের ব্যবধানে খুলে গেল?’ জবাবে সুপার জানান,’চেষ্টা করেছি, কিন্তু উনি চিৎকার করেছেন। তাই আমি খুলতে চাইনি। ওই দিনের পরে ওকে চিকিৎসা করতে হয়েছে।’ বিচারক ফের বলেন, ‘আমি যা দেখছি তাতে কোথাও লেখা নেই যে আংটি খোলা ছিল। আপনার রিপোর্ট অনুসারে আগে আংটি খোলার চেষ্টা হয়েছিল। সম্ভব হয়নি। ওর স্থূলতার সমস্যার জন্য হয়নি বলছেন?’ জবাবে সুপার বলেন, ‘হাত থেকে আংটি খোলার জেরে চামড়া কেটে গিয়েছে। স্কিন টিস্যুর ক্ষতি হয়েছে।’
কিন্তু নির্দেশনামায় বিচারক জানিয়ে দেন, গত শুনানিতেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছিলেন তাঁকে কেউ কোনও দিন বলেননি এই আংটি খুলতে হবে। তাই জেল সুপারের বক্তব্যকে সন্দেহের নজরেই দেখছে আদালত। একই সঙ্গে আদালতের বক্তব্য, ‘জেল সুপার ইচ্ছাকৃত ভাবে আইন ও নিয়ম ভেঙেছেন। দায়িত্ব পালন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।’
ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি অবশ্য আদালতকে এ দিন মনে করিয়ে দেন, এর আগেও একই ভাবে বিচারাধীন বন্দিকে বিশেষ সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে সুপারকে ২০০০ টাকা জরিমানা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই অভিযোগে জেল সুপারের বদলির সংস্থানও রয়েছে বলে ইডি দাবি করে। যদিও বদলির কোনও নির্দেশ না দিয়ে আদালত সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়। এজলাস থেকে বেরিয়ে এদিন কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি দেবাশিস।