বাসুদেব চট্টোপাধ্যায়: কয়লা পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রকে নিয়ে আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে শুনানি হয়। পাশাপাশি জেল হেফাজতে থাকা রত্নেশ বর্মার জামিনের আর্জি জানায় তার আইনজীবী। শুনানি চলাকালীন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী জিজ্ঞেস করেন ১২০বি ধারায় অভিযুক্ত অর্থাৎ আরও কেউ কেউ জড়িত রয়েছে যাদের চার্জশিটে নাম নেই। তারা কারা? তার উত্তরে সিবিআই বিচারককে জানান কিছু পাবলিক সার্ভেন্ট ও প্রাইভেট পার্সন রয়েছে।
সিবিআই আইনজীবী রাকেশ কুমার জানান একটা চেইন সিস্টেমে এই কাজ তারা করেছে। কয়লা সিন্ডিকেটের এই কাজ তারা চেন সিস্টেমে করায় দেশের সম্পত্তি অনেকাংশেই ক্ষতি হচ্ছে। সিবিআই আইনজীবী রাকেশ কুমার বলেন এই রত্নেশ বর্মাকে ধরার জন্য অনেক চেষ্টাই তারা করেছিল। ২০২০ সাল থেকে সে পলাতক ছিল। তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও সে আদালতের দ্বারস্থ হয়নি। সিবিআইকে অনেক বার বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হয়েছে তাকে বা তার বাড়িতে তল্লাশি চালাবার সময়। তাই তার জামিন যদি হয় তাহলে অনেকটাই সমস্যা হবে তদন্তে। সাক্ষী যারা আছে তাদেরও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে, ভয় দেখাচ্ছে জেলে থাকাকালীন।
আরও পড়ুন: Thunderstorm: বাংলার বৃষ্টি-বিপদ বজ্রপাত! কী ভাবে বাঁচবেন?
রত্নেশ বর্মার আইনজীবী বলেন রত্নেশের এই মামলায় অন্যান্য যে অভিযুক্তরা জেলে ছিলেন তারা ৫৪ দিনে জামিন পেয়ে যান, আর রত্নেশের প্রায় ৮৭ দিন জেলে থাকা হয়ে গিয়েছে। বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে কবে ডেট রয়েছে এই মামলার?’ বিচারক সিবিআইকে বলেন, ‘আপনাদের আইনজীবী উপস্থিত ছিল শুনানি গুলোতে? ১৮ জুলাই শুনানিতে আপনারা ও আপনাদের আইনজীবী থাকবে তো? আপনি যাদের হেফাজতে চাইছেন তাদের একপ্রকার বস ১৮ জুলাই পর্যন্ত বাইরে ঘুরে বেড়াবে আর তার সহযোগীরা আপনাদের হেফাজতে থাকবে? আপনারা দিল্লিতে মুভ করছেন তো?’
বিচারক দুই পক্ষের কথা শুনে রায়দান স্থগিত রেখেছেন।
বিকাশ মিশ্রর আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ বলেন কয়লা কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্ট বিকাশ মিশ্রকে যে জামিন দিয়েছিল, তার বিরোধিতা করে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: West Midnapore: ভেঙে ঝুলছে ছাদের চালা, নেই বিদ্যুৎ-জল; তার নিচেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে মিড ডে মিলের রান্না
১০ এপ্রিল ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট সেই ক্রিমিনাল আপিলটাকে ডিসপোজাল করে এবং বিকাশ মিশ্রকে চার দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল। বিকাশ মিশ্রর আইনজীবীরা এই অর্ডারে কিছু ক্লারিফিকেশন দরকার ছিল বলে মনে করেছিল। সেই জন্য একটি ক্লারিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন ফাইল করা হয়।
আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতকে এই বিষয়টা জানান হয়েছিল। সেইমতো আসানসোল সিবিআই আদালতে অ্যাপিয়ার করতে বলা হয়। শুক্রবার এই অ্যাপিয়ারেন্স-এর তারিখ ছিল। যাতে সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারটাকে কম্প্লাই করা যায়, যাতে চার দিনের পুলিস অর্থাৎ সিবিআই হেফাজতে পাঠানো যায়।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে যে অ্যাপ্লিকেশন ফাইল করা হয়েছে, সামনের সপ্তাহে তার শুনানি রয়েছে। আদালতকে এই বিষয়টাও জানানো হয়েছে। আইনজীবী জানিয়েছেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে চার দিনের পুলিস হেফাজতের পর পঞ্চম দিন কি হবে বিকাশ মিশ্রর, সেই ক্লারিফিকেশনটাই আমাদের জানার প্রয়োজন। সেই ক্লারিফিকেশনটা জানার জন্যই সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছি’।
আসানসোল সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট থেকে যদি সাত দিনের মধ্যে ক্লারিফিকেশন নিয়ে আসা না হয় তাহলে ইন ডিফল্ট ওয়ারেন্ট বিকাশ মিশ্র নামে বের করতে বাধ্য থাকব।‘ অর্থাৎ বিকাশ মিশ্রকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সিবিআই গ্রেফতার করতে পারবে।