কখনও বাসের মধ্যে ঘুমন্ত চালকের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে কাচ ভাঙার শব্দে এবং তিনি উঠে দেখছেন, আধলা ইটের ঘায়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে বাসের একটি উইন্ডস্ক্রিন। কিছু দিন পর অন্য একটি বাসের চালক সকালে উঠে বাস বার করতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, বাসের ব্যাটারি চুরি হয়ে গিয়েছে!
বাসকর্মী ও মালিকদের একাংশের বক্তব্য, স্থানীয় জগাছা থানায় অভিযোগ দায়ের করেও কাজ হয়নি। এই ব্যাপারে পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে সাঁতরাগাছির ওই সরকারি বাস টার্মিনাসে রাতে আর বাস রাখার ভরসা পাচ্ছেন না বারাসত-ভিআইপি-সাঁতরাগাছি রুটের বাসকর্মী ও বাস মালিকরা। সন্ধে সাড়ে ৭টাতেই ওই সরকারি বাস টার্মিনাস ছেড়ে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে রুটের ৩৫টি বাসের জন্যই। তার পরেও তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য না-কমলে নিরুপায় হয়ে রুটটাই বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন ওই রুটের বাসকর্মী ও মালিকরা।
অথচ ওই বাস টার্মিনাসের পাশেই হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি সাউথের অফিস। এলাকায় ক্লোজ়্ড সার্কিট টিভি ক্যামেরার নজরদারি। তবু কয়েক মাস ধরে তাঁদের উপর উপদ্রব চলছে বলে বাসকর্মীদের অভিযোগ।
সমস্যাটা ঠিক কোথায়?
বারাসত-ভিআইপি-সাঁতরাগাছি বাস সিন্ডিকেটের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, শুরুতে রাতে টার্মিনাসে বাস না-থাকলেও পরে বাসের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঠিক হয়, ১৪টি বাস সাঁতরাগাছি স্ট্যান্ডে রাতে রাখা হবে। তার পরেই গোলমাল। বাসকর্মীদের একাংশ বলছেন, ‘টার্মিনাসে রাতে বাস রাখা শুরু হওয়ার পরেই বাসে হামলার সূত্রপাত। পরে স্থানীয় কয়েক জন এসে জানান, নৈশপ্রহরী হিসেবে তাঁদের মোতায়েন করলে বাসে আর হামলা হবে না।
দাবি করা হয়, মাসে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা রফা হয়।’ এর পর কিছুদিন হামলা বন্ধ থাকে। কিন্তু সম্প্রতি ‘নৈশপ্রহরার’ চার্জ বাড়ানোর দাবি ওঠে। ‘তাতে রাজি না-হওয়াতেই নতুন করে উৎপাত শুরু হয়েছে,’ বলছেন বাসকর্মীরা।
কী রকম?
টার্মিনাসে সরকারি উদ্যোগে তৈরি শৌচাগার ব্যবহারের জন্য বাস পিছু রোজ ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় যে ভাতের হোটেলে বাসকর্মীরা দুপুরে খান, সেই হোটেলে নাকি ‘নির্দেশ’ দেওয়া হয়েছে, বারাসত-ভিআইপি-সাঁতরাগাছি রুটের কোনও চালক, কন্ডাক্টর বা খালাসিকে যেন খেতে না-দেওয়া হয়!
বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির তরফে রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘অতীতে গ্রামে সামাজিক বয়কট হিসেবে ধোপা-নাপিত বন্ধ করে দেওয়ার নজির ছিল। সাঁতরাগাছি স্ট্যান্ডেও পরিস্থিতি তেমন। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের মাসোহারা না-দেওয়ায় বিভিন্ন রকম জুলুম চলছে।’ ওই রুটের ৩৫টি বাসের উপর ১৫৫ জন কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের রুজি-রুটি নির্ভর করছে। দীর্ঘ এই বাসরুটে রোজ যাতায়াত করেন কয়েক হাজার যাত্রী। রুট বন্ধ হলে বিপদ সবারই।