নিহত আনোয়ার আলির বাড়ি নয়াবস্তি এলাকাতেই। ব্যারাকপুর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার নৌশাদ আলমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর কয়েকটি ডাম্পার রয়েছে। সম্প্রতি জমি কেনাবেচার ব্যবসাও শুরু করেছিলেন। বাড়ির অদূরে তাঁর একটি সাইবার ক্যাফেও রয়েছে। ওই দোকান থেকে মোবাইল কেনাবেচাও হয়।
যদিও দোকানটি তাঁর ছেলে প্রিন্সই দেখভাল করেন। এক বছর আগে টিটাগড় উড়নপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ শামিম ওরফে সানি তাঁর ওই দোকান থেকে প্রায় ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মোবাইল কিনেছিলেন। একটু একটু করে কয়েক দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু বহুদিন ধরেই টাকা দিচ্ছিলেন না সানি। যা নিয়ে দু’জনের মধ্যে গোলমাল হয়। ঈদের পরে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। সেই টাকা আনতে গিয়েই খুন কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে।
আনোয়ারের বাড়ির কিছু দূরেই নয়াবস্তিতে সানির শ্বশুরবাড়ি। সেখানে এসেছিলেন সানির স্ত্রী শবনম পারভিন। সূত্রের খবর, এ দিন সকাল এগারোটা নাগাদ একবার এবং দুপুর ১.১৩ মিনিট নাগাদ শবনম ফোন করে আনোয়ারকে বাপের বাড়িতে এসে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। সেই মতোই এ দিন দুপুরে মসজিদে নমাজ পড়া শেষ করে বাড়ি ফিরে পাওনা টাকা আনতে সানির শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা হন আনোয়ার।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, একটি স্কুটিতে চেপে জনা তিনেক দুষ্কৃতী আসে। এর পর রাস্তা আটকে খুব কাছ থেকে আনোয়ারের গালে এবং ঘাড়ে পরপর দুটো গুলি করে ওই স্কুটিতে চেপেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। স্থানীয়রা রক্তাক্ত আনোয়ারকে উদ্ধার করে ব্যারাকপুর বিএনবসু হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
আনোয়ারের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা। নিহতের দাদা কায়ুম আনসারি বলেন, ‘ভাই তৃণমূল করত ঠিকই। কিন্তু কোনও ঝুটঝামেলায় সে যেত না।’ স্থানীয়দের কথায়, এলাকায় সামাজিক কাজ করতেন আনোয়ার। এ দিনই সানির স্ত্রী শবনমকে পুলিশ আটক করে। খুনে ব্যবহৃত স্কুটিটিও পুলিশ উদ্ধার করেছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় কাউন্সিলার নৌশাদ আলম, ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান উত্তম দাস। নৌশাদ বলেন, ‘আনোয়ার আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী। লক্ষাধিক টাকার উপর সানির থেকে পাওনা ছিল ওর। সেই টাকার জন্যই মেরে দিল ওকে।’ উত্তম দাস বলেন, ‘এ ভাবে দলের একজন কর্মীর খুন হয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক।’
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার বিকেলে টিটাগড় থানায় এসে পুলিশের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘খুনের সম্ভাব্য কারণ আমরা পেয়েছি। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কারণেই খুন বলে মনে করা হচ্ছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। আশা করা যায় শীঘ্রই খুনের ঘটনার কিনারা করা সম্ভব হবে।’
মাস কয়েক আগে এই টিটাগড় থানাতে এসেই শুধু টিটাগড় নয়, ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অন্যান্য থানা এলাকাতেও আইনশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে গিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপের কথাও বলে গিয়েছিলেন বলে খবর। কিন্তু তারপরও অপরাধের গতি যে খুব একটা কমেনি, এ দিনের ঘটনা ফের একবার তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।