কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ঢিলেমির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষত ছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ক্রমশ নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন তাঁরা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এই ঘটনায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার। অভিযোগকারী ছাত্রী জানান, সে দিন দুপুরে ডিরোজিও ভবনের একতলায় একটি শৌচালয়ে যান তিনি। সেখানে পার্টিশন করে এক দিকে মেয়েদের এবং অন্যদিকে ছেলেদের ব্যবহারের ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু অভিযোগ, মাঝের পার্টিশনটি যথেষ্ট উঁচু নয়। ছাত্রী হঠাৎ দেখেন, একটি মোবাইল ক্যামেরা তাঁর দিকে তাক করা। আতঙ্কিত হয়ে সহপাঠীদের সব জানান তিনি। ডিন অফ স্টুডেন্টসের কাছে অভিযোগ জানাতে যান। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত ছাত্রকে চিহ্নিত করার দাবিও জানানো হয়। পড়ুয়াদের চাপের মুখে ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু হয়।
ছাত্রছাত্রীরাই এক জনকে চিহ্নিত করে তাঁকে চেপে ধরেন। কিন্তু দেখা যায়, ছাত্রটির মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে কোনও ছবি বা ভিডিয়ো নেই। এতে সন্দেহ বাড়ায় ছাত্রের হোয়াটসঅ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া খতিয়ে দেখেন পড়ুয়ারা। অভিযোগ, সেখানে বেশ কিছু আপত্তিকর কথোপকথন, প্রেসিডেন্সির ছাত্রীদের ছবি ও ভিডিয়ো শেয়ার করা হয়েছে বলে দেখা যায়।
এতে তাঁর প্রতি সন্দেহ গাঢ় হয়। সূত্রের খবর, ওই ছাত্র ভিডিয়ো রেকর্ডিং করার চেষ্টার কথা স্বীকার করে মুচলেকাও দিয়েছেন। যদিও তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকায় ফোন এবং মেসেজ পাঠিয়েও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ডিন অফ স্টুডেন্টস অরুণ মাইতি বলেন, ‘এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এ ধরনের ঘটনা একেবারেই মেনে নেব না।’ সূত্রের খবর, অভিযোগকারী ছাত্রী পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন।
কিছু দিন ধরেই যাদবপুর এবং প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাস থেকে এমন নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ উঠেছে। আগে প্রেসিডেন্সিতেই এক ইংরেজির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে আইসিসি। যাদবপুর ক্যাম্পাসে সম্প্রতি চলাফেরার পথে বাধা পেয়ে প্রতিবাদ করায় মার খেয়েছেন দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা। উঠেছে পড়ুয়াদের যৌনদৃশ্যে জোর করে অভিনয় করানোর অভিযোগও। যা নিয়ে ইউজিসির কাছে র্যাগিংয়ের নালিশ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে নেশাচক্রের অভিযোগ তো আছেই।
প্রেসিডেন্সির ছাত্রী বরিষণ রায়ের প্রশ্ন, ‘এই ক্যাম্পাসে অনেকটা সময় কাটে। এটা আমাদের আরও একটা বাড়ি। সেখানে কি আমরা যথেষ্ট নিরাপদ?’ আর এক ছাত্র ঋষভ সাহার অভিযোগ, ‘ক্যাম্পাসে লিঙ্গ সচেতনতা, মানসিক স্বাস্থ্যের সচেতনতা- কোনও ব্যাপারেই কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই। তাঁরা কেবল ছাত্র আন্দোলনের উপর নজরদারি করতে ব্যস্ত।’
যাদবপুরের পড়ুয়াদের একাংশেরও এমনই মত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের পড়ুয়া বর্ষা বড়ালের বক্তব্য, ‘দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে ছাত্রভোট হয় না। যেখানে গণতন্ত্রই সুরক্ষিত নয়, সেখানে বাকি সুরক্ষা তো ভেঙে পড়বেই।’ যাদবপুরের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুর অবশ্য বক্তব্য, ‘এই সমস্যার সমাধানে আমরা নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে পরামর্শ নিচ্ছি। নানা কমিটিও গড়া হয়েছে। সমস্যা হয়তো অচিরেই মিটে যাবে।’