Birbhum News : ১২ বছর পর ফিরলেন লাভপুরের ঘরছাড়ারা – homeless of lovepur villagers returned home after 12 years of high court orders


এই সময়, লাভপুর: হাইকোর্টের নির্দেশে ১২ বছর পরে ঘরে ফিরলেন লাভপুরের ঘরছাড়ারা। মঙ্গলবার সকালে লাভপুর থানার ওসির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘরছাড়া শতাধিক মানুষকে ফেরানোর উদ্যোগ নেন। তবে বীরভূমের লাভপুর-বুনিয়াডাঙা গ্রামে প্রথমদিন ফিরে আসেন মাত্র ৪৪ জন। এ দিন সকালেই হাইকোর্টের নির্দেশে শুরু হয় ঘরছাড়াদের ফেরানোর কাজ।

পুলিশ তালিকা হাতে নিয়ে একে একে ডাকতে থাকে সুজল শেখ, আনাসা বিবি, ছোট্টু শেখ, মুসুর শেখ, জালিম শেখ, মালু বিবিদের। সাড়া আসতেই কাগজে টিক পড়ে। পুলিশকর্মীদের ঘিরে উৎসুক মুখগুলো দাঁড়িয়ে। এত বছর পরে আবার নিজেদের ভিটেমাটিতে ফেরা। কারও কারও চোখ ছলছল করছিল। কেউ কিছু বলতেই পারছিলেন না।

Birbhum News : ‘ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি চাই’, দাবিতে সদাইপুর থানায় বিক্ষোভ আদিবাসীদের
মালু বিবি চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, “ভিটে ছেড়ে রাতের অন্ধকারে ছেলে কোলে নিয়ে মাঠে মাঠে পালিয়ে গিয়েছিলাম। আজ বাড়ি ফিরলাম।” একইসঙ্গে কিছুটা উষ্মা গলায়। সানোয়ার শেখ বলেন, “আদালত নির্দেশ দেওয়ার পর সেই পুলিশই গ্রামে ফেরাল। অথচ এর আগে একাধিকবার পুলিশকে এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে বলা হলে কেউ এগিয়ে আসেনি।”

তবে বাড়ি ফিরলেও পরিবারের সকলেই চিন্তা মুক্ত নন। ভয় পাচ্ছেন, আবার যদি হামলা হয়। লাভপুর বুনিয়াডাঙা এলাকার ময়ূরাক্ষী নদীর বালিরঘাটের দখলদারি নিয়ে জেরিনা বিবির দশ ছেলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব লেগেছিল তৎকালীন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা মনিরুল ইসলামের। জেরিনা বিবির ৯ ছেলের সকলেই তখন সিপিএম সমর্থক। অশান্তি মেটাতে ২০১০ সালের ৩ জুন বিকেলে লাভপুরের নবগ্রাম বুনিয়াডাঙায় নিজের বাড়ির উঠোনে সালিশি সভা ডেকেছিলেন মনিরুল।

Street Dog Lover : পথের কুকুরকে খেতে দেওয়ার অপরাধে গ্রামছাড়া ৩ পরিবার
অভিযোগ, সালিশি সভা চলাকালীন ঝামেলা শুরু হয়। সেই সময় জেরিনা বিবির তিন ছেলে কটুন শেখ, ধানু শেখ ও তরুক শেখকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে মনিরুল ও তার দলবলের বিরুদ্ধে। পরের দিন অর্থাৎ ৪ জুন মনিরুল ইসলাম-সহ ৫২ জনের নামে লাভপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিহতদের দাদা সানোয়ার শেখ। কিন্তু তার পরই ৬ ভাই তাঁদের বৃদ্ধা মা জেরিনা বিবিকে নিয়ে রাতারাতি গ্রাম ছাড়েন।

শুধু তাঁরাই নন, অভিযোগ, মনিরুলের ভয়েই গ্রাম থেকে পালান ওই পরিবারের মোট ১৫০ জন। কেউ জেলায়, কেউ বা জেলার বাইরে। আর মনিরুল ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তৃণমূলে যোগ দেন। এখন তিনি ফের দলবদলু। লাভপুর মামলার তদন্তে ৫২ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু তাতে নাম ছিল না মনিরুলের।

পরে নিহতদের দাদা সানোয়ার মামলা তুলে নেন। তা মনিরুলের চাপের কারণে বলেই এলাকায় শোনা যায়। কিন্তু হাল ছাড়েননি জেরিনা বিবি। তিনি মামলা করেন। জানিয়ে দেন, শেষ দেখে ছাড়বেন। সেই মামলা গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত।

Birbhum News : ডাইনি অপবাদে ৩ বছর ধরে ঘরছাড়া পরিবার, ফেরানোর উদ্যোগ বোলপুর জেলা প্রশাসনের
২০১৬ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশি প্রহরা বসানো হয়েছিল জেরিনা বিবির বাড়িতে। কিন্তু ২০১৭ সালে আবার তা তুলে নেওয়া হয়। হাইকোর্টের নির্দেশেই ফের তদন্ত শুরু করে পুলিশ। আর তার সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিটে নাম ঢোকে মুকুল রায় ও মনিরুলের। শেষমেশ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। সেখানেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ১৬ মে-র মধ্যে গ্রামে ফেরাতে হবে ঘরছাড়াদের।

এতদিন পর গ্রামে ফিরে নিহতদের আরও এক ভাই মজল শেখ বলেন, “আমাদের ঘরের লোক খুন হল। আমরাই গ্রামছাড়া হলাম। পুলিশ ঢোকায়নি। আজ ফিরলাম। খুব ভালো লাগছে। আদালতের নির্দেশে পুলিশের ভরসাতেই ঘরে ফিরলাম।” তবে এদিন কথা বলার জন্য মনিরুল ইসলামকে কল করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *